চকরিয়াThursday , 25 May 2023
  1. Lead Post
  2. অর্থনীতি
  3. আইন আদালত
  4. আজব খবর
  5. আন্তর্জাতিক
  6. আলোকিত চকোরিয়া
  7. আলোকিত বন্ধু সমাবেশ
  8. আলোকিত বাংলাদেশ
  9. আলোকিত বিজ্ঞাপন
  10. আলোকিত মানুষ
  11. আলোকিত শিশু
  12. আলোকিত সংবাদ
  13. আলোকিত সাময়িকী
  14. ইসলাম ও ধর্ম
  15. কক্সবাজার
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিনে স্মৃতিচারণে আলোকিত চকরিয়া

Link Copied!

বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলাম – (১)
শুকনো খটখটে, এবড়োথেবড়ো, উঁচুনিচু, ঢেউখেলানো ভূমি। শুকনো রুক্ষ মাটি রোদে পুড়ে খাঁখাঁ করছে। কৃষির জমির সামান্য মাটিটুকুও পাথর, কাঁকর আর বালির মিশেলে কালচে হয়ে গেছে। বিস্তীর্ণ ধু-ধু মাঠে ঝাঁকড়া মাথায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিছু তালগাছ। একটা মাত্র নদী নাম ‘অজয় নদ’ মৃতপ্রায় অবস্থায় বেঁচে আছে। গ্রীষ্মের সময় পানি শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। শুকনো মওসুমে নদীর উপর দিয়ে চলে ঘোড়ার গাড়ি। বর্ষার প্রারম্ভে এই নদীই দুকূল ছাপিয়ে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। এদিকে ওদিকে ছোট বড় পাহাড় জঙ্গল থাকলেও কয়লা খনির দূষিত বাতাসে চারিদিক বিষণ্ন হয়ে থাকে সব সময়। এই স্থানের নামই চুরুলিয়া যা বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমায় অবস্থিত। প্রকৃতির এই বিরুদ্ধ পরিবেশের ছোঁয়ায় মানুষের চালচলন, মেজাজ-মর্জিও প্রকৃতির মতোই রুক্ষ কর্কশ হয়ে যায়।

কাজী নজরুল ইসলামের উপাধি – (২)
বিরুদ্ধ পরিবেশেই ১৮৯৯ সালের ২৪ শে মে, বাংলা সন ১৩০৬, তারিখ ১১ই জ্যৈষ্ঠ মঙ্গলবার কাজী আমিনউল্লাহ্র পুত্র কাজী ফকির আহমদের দ্বিতীয় পত্নী জাহেদা খাতুনের ষষ্ঠ সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। নবজাতকের সন্তানের নাম রাখা হয় কাজী নজরুল ইসলাম। কাজী আলী হোসেন নামে নজরুলের এক ভাই এবং উম্মে কুলসুম নামে এক বোন ছিল। এছাড়াও কাজী ফকির আহমেদের ঔরসে প্রথম স্ত্রীর গর্ভে সাজেদুন্নেসা নামে একজন কন্যাসন্তান ছিল। মুঘল সম্রাট শাহ আলম-এর শাসনকালে বিহারের রাজধানী পাটনার হাজিপুর থেকে নজরুল পরিবার চুরুলিয়ায় আবাস গড়ে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সম্রাটের আদেশে স্থানীয়ভাবে আদালত স্থাপন করা হয়। সম্রাটের প্রতিনিধি সমস্যার সমাধান করতে পারছিলেন না। নতুন আসা পরিবারের একজন সদস্য সমস্যার সুন্দর সমাধান করে দেন। দুপক্ষই তাঁর রায় মেনে নিলে সম্রাটের পক্ষ থেকে তাকে কাজী উপাধিতে ভূষিত করা হলো। সম্রাটের দরবার হতে দান হিসেবে দেওয়া হয় বেশকিছু জায়গাজমি। তখন থেকে পরিবারটির উপাধি হয়ে যায় কাজী পরিবার। এই পরিবারেরই সদস্য ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম।

কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কবিতা – (৩)
নজরুলের বাড়ির পাশে ছিল নরোত্তম রাজার গড়। গড়ের উলটো দিকে হাজী পালোয়ানের পুকুর। হাজী পালোয়ান নামে এক আধ্যাত্মিক ফকির রুক্ষ মাটির বুকে এই পুকুর খনন করেছিলেন। পুকুরপাড়ে ছিল হাজী পালোয়ানের মাজার। মাজারের পাশে ছিল একটি মসজিদ। এই মসজিদের খাদেম ছিলেন নজরুল। বাল্যকালে নজরুল এই মসজিদে আজান দেওয়া, নামাজ পড়ানো ছাড়াও ছোটদের হাদিস পড়াতেন। এখান থেকেই তিনি কোরআন-হাদিস সমপর্কে জ্ঞান অর্জন করেন। চাচা বজলে করিমের কাছ থেকে ফারসি ভাষা এবং কবিতার পাঠ নিয়ে আরবি ফার্সির সমন্বয়ে একদিন নজরুল লিখে ফেলেন একটি পদ্য। এটাই নজরুলের হাতে লেখা প্রথম কবিতা।
‘মেরা দিল বেতার কিয়া তেরে আক্রয়ে কামান;
জ্বলা যাতা হ্যায় ইশক মে জান পেরেশান।’

কাজী নজরুল ইসলামের আত্মকাহিনী – (৪)
বাংলা সাহিত্যে নজরুল- (১)
এরপর চাষার সং, শকুনি বধ, মেঘনাদ বধ, দাতা কর্ণ আরো অসংখ্য পালাগান ও নাটক রচনা করেন। লেটো গানের দলে তাঁকে নিয়ে টানাটানি পড়ে যায়। কিন্তু নজরুল বাল্যকাল থেকেই ছিলেন বাঁধনহারা। একদিন দলের ধরাবাঁধা নিয়মকানুন ছেড়ে, গ্রাম ছেড়ে, দল ছেড়ে যাত্রা করেন অজানার পথে। হাজির হন আসানসোলে। নজরুল হয়ে উঠেছিলেন আসানসোলের বেকারি বয়। রুটির দোকানের পাঁচ টাকা মাইনের ভৃত্য হয়ে কাটালেন কিছুদিন। সেখান থেকে ময়মনসিংহ দরিরামপুর গ্রাম। ময়মনসিংহ থেকে পালিয়ে ছুটে গেলেন করাচিতে। নজরুলের জীবনই যেন একজন বাউন্ডুলে যাযাবরের আত্মকাহিনি। তাঁর জীবনের বাঁধনহারা উল্লাসের রূপক হয়ে বারবার আবির্ভূত হয়েছেন আরবের বেদুইন, ভবঘুরে আর বাউন্ডুলেরা। আর তাই তো চেঙ্গিস, কালাপাহাড়, গজনী মামুদরা বারবার উঠে এসেছে তাঁর কবিতায় বিদ্রোহের প্রতীক হিসেবে। লেটোর দল ছেড়ে কাশিমবাজারের নিকটে মাথরুন গ্রামে নবীনচন্দ্র ইন্সটিটিউট যা মাথরুন স্কুল নামে পরিচিতি ছিল সেখানে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এই স্কুলেই বন্ধু হিসেবে পেয়েছিলেন শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়কে। নজরুল, শৈলেন আর শৈলজা মুসলমান, ক্রিশ্চান আর ব্রাহ্মণ এই তিনজনের মধ্যে ছিল প্রগাঢ় সমপর্ক। জ্ঞান অর্জনের পথে ভাষা কখনো তাঁর কাছে বাধা হয়ে উঠতে পারেনি।

কাজী নজরুল ইসলামের সৈনিক জীবন- (৫)
নজরুল কারো দুঃখ সহ্য করতে পারতেন না। রুটির দোকানে কাজ করার সময় ঘুঙ্ঘুর বাঁধা লাঠি হাতে এক ফকির ঘুরে বেড়াত। সে কারো কাছে ভিক্ষা চাইত না। তাঁর নাম ছিল মৌনি ফকির। নজরুল ফকিরকে দেখামাত্রই ছুটে যেতেন। ভিক্ষা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে গানও শোনাতেন। একদিন মর্মান্তিকভাবে ঘোড়ার গাড়ির চাকায় পিষ্ঠ হয়ে মৌনি ফকির মারা যায়। ব্যথাতুর কবি সেদিনই অর্থাত্ ১৯১৬ সালের এপ্রিল মাসের এক রাতে মৌনি ফকিরকে নিয়ে একটি কবিতা লেখেন। কবিতার নাম ক্ষমা। বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য পত্রিকায় ১৩২৬ সালের শ্রাবণ সংখ্যায় (১৯১৯ সালের জুলাই-আগস্ট) ‘ক্ষমা’ কবিতাটিই ‘মুক্তি’ নামে প্রকাশিত হয়। মুক্তি নজরুলের প্রকাশিত প্রথম কবিতা। ১৯১৭ সাল, নজরুল তখন দশম শ্রেণির ছাত্র। বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে। মেট্রিক পরীক্ষার স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়ে চুরুলিয়াকে বিদায় জানিয়ে যোগ দেন বেঙ্গল রেজিমেন্টে। লাহোর থেকে পেশোয়ার, পেশোয়ার থেকে করাচি নৈশেরা শুরু হয় সৈনিকজীবন। সেনানিবাসে থাকাকালীন তিনি দ্রুতই প্রমোশন পেয়ে হাবিলদার পদে উপনীত হন।
১৯২০ সালে বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভেঙে দেওয়া হলে নজরুল কলকাতায় ফিরে ৩২ নম্বর কলেজ স্ট্রিটে বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে আসেন। নজরুল তাঁর জীবনে সৈনিককালীন স্মৃতি বহন করতেন। গায়ে থাকত গেরুয়া রঙের পাঞ্জাবি, গেরুয়া রঙের চাদর, হাতে একখানা হাতপাখা, মাথায় একরাশ এলোচুল কাঁধ পর্যন্ত ঝোলানো। তাঁর বিচিত্র পোশাকের সঙ্গে পায়ে থাকত মিলিটারি বুট। বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির সহকারী সম্পাদক মুজফফর আহমেদের সঙ্গে ছিল নজরুলের প্রগাঢ় সমপর্ক। ১৯২০ সালের ১২ই জুলাই দুজনে একসঙ্গে ‘নবযুগ’ নামের সান্ধ্য পত্রিকা বের করেন।

কাজী নজরুল ইসলামের প্রেম ও বিরহ-(৬)
নজরুল বারবার প্রেমে পড়েছেন। কিন্তু কুমিল্লার পল্লিবালা নার্গিসের প্রেমের বারিধারায় সিক্ত হয়েছিল তাঁর মনপ্রাণ। কিন্তু ঘরজামাই থাকার হীন শর্তের কারণে বাসর রাতে নার্গিসকে ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন। নজরুলের বক্ষে পারিজাত মন্দারের মতো চির অম্লান হয়েছিলেন নার্গিস। নার্গিসের সঙ্গে বিচ্ছেদের ফলে বেদনার আগুনে দগ্ধ হয়ে সৃষ্টি হয়েছে অগ্নিবীণা আর ধূমকেতুর জ্বালা।

কাজী নজরুল ইসলামের বন্দী জীবন (৭)
নার্গিসের সঙ্গে বিচ্ছেদের ফলে বেদনার আগুনে দগ্ধ হয়ে সৃষ্টি হয়েছে অগ্নিবীণা আর ধূমকেতুর জ্বালা।
কুমিল্লা থেকে ফিরে নজরুল কলকাতায় এসে মুজফফর আহমেদের ৩/৪-সি তালতলা লেনের বাসায় ওঠেন। এই বাড়িতেই ১৯২১ সালের ডিসেম্বরের এক শীতের রাতে কবি রচনা করেন তাঁর কালজয়ী কবিতা ‘বিদ্রোহী’। ১৯২২ সালে তাঁর প্রকাশিত ধূমকেতু পত্রিকায় আনন্দময়ীর আগমনে কবিতা প্রকাশের কারণে রাজদ্রোহিতার অপরাধ এনে নজরুলকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। যন্ত্রণার নীল হয়ে বাংলা সাহিত্যের প্রথম কবি হিসেবে কবিতা লেখার জন্য কারাদণ্ড স্বীকার করে নেন। কারারুদ্ধ অবস্থায় বন্দীদের প্রতি অবিচারের প্রতিবাদে তিনি অনশন করেন। তাঁকে নাকে নল ঢুকিয়ে খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করা হলো। তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। কবি বদ্ধ ঘরে উচ্চারণ করেন ‘কারার ঐ লৌহকপাট ভেঙে ফেল কর রে লোপাট’—অর্ফিয়াসের মতো তাঁর হিরন্ময় সুরে চারপাশে সাড়া পড়ে যায়। চিরবিদ্রোহী নজরুল ছিলেন বাংলা সাহিত্যের অর্ফিয়াস। তাঁর উদয়ে থেমে গিয়েছিল বাংলা কবিতার চিরন্তন ভাষা। ছন্দের অক্ষরে সূচিত হয়েছিল বিদ্রোহের প্রবল জোয়ার। নতুন জোয়ার উঠল বাংলা সাহিত্যেও।
……………………
শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন
বি এম হাবিব উল্লাহ
সম্পাদক ও প্রকাশক
আলোকিত চকরিয়া ডট কম

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।