কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের পহরচাঁদা ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী মুন্সিঘোনা এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের ডজনখানেক স্থানীয় নেতার নেতৃত্বে মাতামুহুরি নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসব চললেও এ বিশাল আকারের ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধে কোন অদৃশ্য কারণে নীরব রয়েছে উপজেলা প্রশাসন। বরইতলী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক এমইউপি ও বর্তমান ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নিয়াজুল ইসলাম বাদল, মোঃ নাজেম উদ্দিন দুলাল, মোঃ ফারুক, বিএনপি নেতা মোঃ হেলাল উদ্দিন, মোঃ মিজানুর রহমান, নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা পরিচয়ে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়েই মূলত মাতামুহুরি নদীর পহরচাঁদা মুন্সিঘোনা রাবারড্যাম পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে তারা। সূত্রে জানা যায়, প্রবাহমান খাল কিংবা নদী থেকে বালু উত্তোলনে আইনগত বাঁধা থাকলেও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে দেদারছে বালু উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে এ অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা। এতে করে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমান রাজস্ব। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় কয়েকবছর ধরে চলছে এই বালু উত্তোলন। যার ফলে নদী ভাঙনের শংঙ্কায় রয়েছে নদীর পাড়ের ২শতাধিক পরিবার।অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে উত্তোলন করা হাজার হাজার ঘনফুট বালু স্তুপ করা রয়েছে। এসব বালু গাড়ি যোগে চকরিয়া-পেকুয়ার বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করা হবে। এছাড়া মানুষের ভিটেবাড়ি ভরাট কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এসব বালুভর্তি বড় বড় ট্রাক-পিকআপ গাড়ি গ্রামীণ সড়ক দিয়ে চলাচল করার কারণে সংস্কারের কয়েকদিনের ব্যবধানে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সড়ক দিয়ে চলাচলরত সাধারণ পথচারীরা। সেই সাথে প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা। এসময় তারা আরো জানান, অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়াতে আইনের প্রতি তোয়াক্কা করেন না। এমনকি, কেউ প্রতিবাদ করার চেষ্টা করলেও তাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকিধমকি প্রদর্শন করেন তারা। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে মাতামুহুরী নদী থেকে বালু উত্তোলন করে পাচার করে আসলেও কোন অদৃশ্য কারণে ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে ওই প্রভাবশালী ক্ষমতাসীন দলের নেতা পরিচয়দানকারী ব্যক্তিরা। এসময় এসব অবৈধ বালুখেকোদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জোর দাবী জানান স্থানীয় এলাকাবাসী। এবিষয়ে স্থানীয় ৮নং ওয়ার্ডের এমইউপি শওকত ওসমান জানান, দীর্ঘদিন ধরে পহরচাঁদা মুন্সিঘোনা গ্রামের মাতামুহুরি নদীর রাবারড্যাম পয়েন্ট থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে আসছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। এবিষয়ে বেশ কিছু সরকারি দপ্তরে অভিযোগ করলেও পাওয়া যায়নি কোন প্রতিকার। কোন অদৃশ্য কারণে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে তা আমার বোধগম্য নয়। এসব অবৈধ বালি উত্তোলনের বিরাট ড্রেজার মেশিনটি রাবারড্যাম লাগায়ো হওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে সেটিও। এসব অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে রাবারড্যামের গোঁড়া থেকে বালু সরে গিয়ে ফেঁটে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে রাবারড্যামটির রাবার। আর এ রাবারড্যামটি ফেটে গেলে মিঠা পানির অভাবে বিগ্ন ঘটতে পারে মৌসুমি চাষাবাদে। এছাড়াও এসব অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে নদীর দুপাড়ের বাসিন্দারা রয়েছে প্রচন্ড রকমের দুশ্চিন্তায়। কারণ, আগামী বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে ভাঙনের কবলে পড়তে পারে নদীর দুপাড়। ফলে গৃহহারা হবে শত শত পরিবার এবং নদী গর্ভে বিলীন হবে ফসলি জমি। আর এসব অবৈধ বালু পরিবহন করতে গিয়ে সড়কে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনা ও সড়কে ভাঙন যেন লেগেই আছে। এসব অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।এ অবৈধ বালু উত্তোলনের ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ানের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, এবিষয়ে আমাদের সঠিক জানা ছিলোনা। কেউ যদি আমাদেরকে অভিযোগ দেওয়ার পরও ব্যবস্থা নেইনি বললে তা ভূল হবে। বনখেকো, বালুখেকো ও ভূমিখেকোদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। আপনাদের মাধ্যমে এ বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। দ্রুত সে জায়গাতে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।