পবিত্র শবে বরাত। এটি লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান তথা মধ্য শাবানের রাত। হাদিস শরিফে এ রাত্রির জন্য এ পরিভাষা-ই ব্যবহার করা হয়েছে। তবে উপমহাদেশে যুগ যুগ ধরে শবে বরাত নামেই এ রাত্রির বহুল পরিচিতি রয়েছে। কোনো কোনো ইসলামী চিন্তাবিদ এ রাত্রিকে লাইলাতুল বারাআহ বা নিষ্কৃতির রাত বা গুনাহ থেকে মুক্তির রাতও বলে থাকেন।বহু মুসলিম দেশে এ রাত্রি সিয়াম-কিয়ামের মধ্যদিয়ে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও গভীর ভক্তি সহকারে পালিত হয়। এ রাতের তাৎপর্য ও ফজিলত সম্পর্কে নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বেশ কয়েকটি হাদিস রেওয়ায়েত হয়েছে। তবে সবচেয়ে বিশুদ্ধ যে হাদিসটি পাওয়া যায় তা হচ্ছে, “হযরত আবু মুসা (রা.) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা মধ্য শাবানের রাতে এক বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতিরেকে সবাইকে ক্ষমা করে দেন’ (মুসনাদে আহমদ)। সহীহ হাদিস গ্রন্থ ইবনে মাজাহ’র অন্য একটি রেওয়ায়েতে এ রাত্রে আল্লাহ পাক হত্যাকারী ও হিংসুক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।শাবান মাস রমজানুল মোবারকের পূর্ববতী ও সবচেয়ে নিকটবর্তী মাস হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্ব ও ফজিলতসমৃদ্ধ। রাসুলে আকরাম সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসে প্রায়ই রোজা রাখতেন। অন্যান্য মাসের তুলনায় শাবান মাসের রোজা রাসূলে আকরাম (সা.) এর কাছে অধিক প্রিয় ছিল; তিনি এ মাসের অধিকাংশ দিন রোজা পালন করতেন আর বলতেন, ‘রমজান মাসে সুষ্ঠুভাবে রোজা রাখার মানসে তোমরা শাবান মাসে রোজায় অভ্যস্ত হয়ে শরীরকে পাক-সাফ করে নাও। যে ব্যক্তি এ মাসে তিনটি রোজা রাখবে তার গুনাহ মাফ করা হবে’। (আবু দাউদ শরীফ)রাসুলুল্লাহর প্রিয় সাহাবী হযরত আনাস বিন মালিক (রা.) সে যুগের মুসলমানদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরে বলেন, “তখন শাবান মাসের আগমন ঘটলে মুসলমানরা বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াতে মনোনিবেশ করতো এবং বিত্তশালীরা ফকির-মিসকিনদের কাছে তাদের ধন-সম্পদের জাকাত-সাদাকা দিতে করতে থাকতো যাতে অভাবগ্রস্ত পরিবারগুলো একটু স্বস্তি ও শক্তি সঞ্চয় করে রমজানের রোজাগুলো ভালভাবে অতিবাহিত করতে পারে।আজকাল শবে বরাতকে কেন্দ্র করে ইসলাম সম্মত-অসম্মত নানান আয়োজন দেখা যায়, তা থেকে আমাদেরকে বিরত থাকতে হবে। অনেকে এ রাতে মোমবাতি জ্বালানো, হৈ হুল্লোড় ও দিক বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। কবর বা মসজিদে আলোকসজ্জা এবং বিশেষভাবে হালুয়া-পায়েশ পাকিয়ে থাকে। কেউ কেউ বাজি ফুটিয়ে হাসি-উল্লাস করে। এসব কাজ ইসলাম সমর্থন করে না। মাহে শাবানের রহমত ও বরকত লাভে এ রাতে প্রত্যেক মুসলমান আল্লাহ তাআলার কাছে তাওবা-ইসতেগফার ও দুআ-দরুদ, তাসবিহ-তিলাওয়াত, তাহাজ্জুদ ও দান-খয়রাত করে আল্লাহ পাকের রেজামন্দি হাছিলে অগ্রসর হতে পারে।