পবিত্র ঈদুল আজহা আজ।অন্যতম ধর্মীয় উৎসবটি যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে উদযাপন করবেন মুসলমানরা। মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদের জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করবেন। এদিন ঈদের নামাজ শেষে মুসল্লিদের অনেকেই যাবেন কবরস্থানে। চির বিদায় নেওয়া স্বজনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে আকুতি জানাবেন।নবী ইব্রাহীম (আ.), তাঁর স্ত্রী হাজেরা ও ছেলে ইসমাঈলের ত্যাগের স্মৃতি বিজড়িত উৎসব ঈদুল আজহা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন। এ কোরবানি শুধু পশু কোরবানি নয়, নিজের পশুত্ব, ক্ষুদ্রতা, স্বার্থপরতা, হীনতা ও অহংকারের কোরবানি করা।ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীসহ বিশ্বের সকল মুসলমানদের আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।রাষ্ট্রপতি বলেন, করোনা মহামারির অভিঘাত ও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ-সংঘাতের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। এ প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী নিম্ন আয়ের মানুষ নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝে দিনাতিপাত করছে। সমাজের দারিদ্র্যপীড়িত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে এবং তাদের পাশে দাঁড়াতে দেশের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।এদিকে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মুসলমানদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, ঈদুল আজহা শান্তি, সহমর্মিতা, ত্যাগ ও ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষা দেয়। হযরত ইবরাহীম (আ.) আল্লাহর উদ্দেশে প্রিয় বস্তুকে উৎসর্গের মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি লাভের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। বিশ্ববাসীর কাছে হযরত ইবরাহীম (আ.) এর শিক্ষা চিরকাল অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।শেখ হাসিনা বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহার উৎসব পালনের সময় সচ্ছল মুসলমানগণ কোরবানি করে থাকে। কোরবানিকৃত পশুর মাংস আত্মীয়স্বজন ও গরিব-দুঃখীর মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে মানুষে-মানুষে সহমর্মিতা ও সাম্যের বন্ধন প্রতিষ্ঠা করে। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে মুসলমানদের ত্যাগ, আত্মশুদ্ধি, সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন পরিব্যাপ্তি লাভ করুক। হাসি-খুশি ও ঈদের অনাবিল আনন্দে প্রতিটি মানুষের জীবন পূর্ণতায় ভরে উঠুক।পবিত্র ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন, সুখী-সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।চট্টগ্রামে কখন কোথায় ঈদ জামাত-চট্টগ্রামে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে জমিয়াতুল ফালাহ্ জাতীয় মসজিদে। সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় নগরীর ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদে প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৭টায় এবং দ্বিতীয় জামাত সকাল সাড়ে ৮টায়।প্রথম ও প্রধান জামাতে ইমামতি করবেন খতিব সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দীন আল কাদেরী এবং দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করবেন পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা আহমদুল হক।এদিকে জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত কমিটির উদ্যোগে নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের সামনে সকাল ৮টায় ঈদুল আজহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে।এতে ইমামতি করবেন বাইতুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসার সাবেক প্রিন্সিপ্যাল মাওলানা অধ্যক্ষ ড. সাইয়েদ মুহাম্মদ আবু নোমান।এছাড়া নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ঈদ জামাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওয়ার্ড কাউন্সিলররা প্রতিটি ওয়ার্ডের প্রধান ঈদ জামাতে উপস্থিত থাকবেন। বাকলিয়া সিটি কর্পোরেশন স্টেডিয়ামে, লালদীঘি শাহী জামে মসজিদ ও জালালাবাদ আরেফিন নগর সিটি কর্পোরেশন কেন্দ্রীয় কবরস্থান জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।এছাড়া নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড, পাড়া ও মহল্লার জামে মসজিদ এবং সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে প্রায় ১৬৪টি জামে মসজিদ ও ঈদগাহ ময়দানে ঈদ জামাত হবে। কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত কমিটির উদ্যোগে প্রায় শতাধিক ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।কোরবানি ব্যবস্থাপনা-কোররবানি করা পশুর রক্ত বা বর্জ্যে যাতে পরিবেশ দুর্গন্ধময় না হয়, সে বিষয়ে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ দেশের সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। ঈদুল আজহার পূর্ববর্তী জুমার খুৎবায় এ বিষয়ে মুসল্লিদের সচেতন করা হয়েছে।