খালের নাম তিশীখালী। চলনবিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ৫ কিলোমিটারের এই খালটি দুই অর্থবছরে পুনঃখনন করা হয়েছে। অথচ স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে পাঁচ ভাগে ভাগ করে ৫ লাখ টাকায় সরকারি এই খালটি বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।অভিযুক্ত ওই আওয়ামী লীগ নেতার নাম আল তৌফিক পরশ। তিনি নাটোরের সিংড়া উপজেলার চৌগ্রাম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিংড়া উপজেলার চৌগ্রামের হুলহুলিয়া থেকে সারদানগর পর্যন্ত স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মীরা নেতার কাছ থেকে তিশীখালী খালটি কিনেছেন। ৫ কিলোমিটারের পুরো খালটিই বিক্রি করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা পরশ। এই নেতা হুলহুলিয়া সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও আছেন। খালটিতে এখন চলছে পানি শুকিয়ে মাছ শিকারের মহোৎসব। অসময়ে খালের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় সেচ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন এই অঞ্চলের কৃষকরা।স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নেতা পরশ স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী আলমগীর হোসেন ও বিদ্যুৎ শেখের কাছে তিশীখালি খালের দেড় কিলোমিটার অংশ বিক্রি করেছেন। তারাই খালের হুলহুলিয়া এলাকায় মাটির বাঁধ নির্মাণ করেছেন। বিদ্যুৎ চালিত পাম্প দিয়ে চলছে পানি সেচের কাজ। ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায় কিনে দেড় কিলোমিটারে মাটির অন্তত পাঁচটি বাঁধ দিয়েছেন।কৃষকদের অভিযোগ, চলনবিলের ফসলি জমি সেচের জন্য খালটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চাষাবাদের ক্ষেত্রে আশপাশের কয়েক হাজার কৃষক এই খালের ওপর নির্ভরশীল। কৃষকদের কথা বিবেচনায় এনেই খালটি পুনঃখনন করা হয়েছে। অথচ সেচ মৌসুম শুরুর আগেই প্রভাবশালীরা পানি সেচে মাছ শিকার শুরু করেছেন। এভাবে খালের পানি শুকিয়ে ফেলায় চাষাবাদ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন তারা। এছাড়া খালের পেটে ঘনঘন মাটির বাঁধ দেওয়ায় ফসলের খেতে সার-কীটসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে পারছেন না। কারণ পাড়াপাড়ের নৌকাগুলো বন্ধ করে দিয়েছেন খালের দখলদাররা। যে উদ্দেশ্য নিয়ে খালটি পুনঃখনন করা হয়েছিল তার কিছুই বাস্তবায়ন হচ্ছে না।লের দখলদার আওয়ামী লীগ কর্মী বিদ্যুৎ জানান, নেতা আল তৌফিক পরশের কাছ থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায় খালের দেড় কিলোমিটার অংশ কিনেছেন তারা। এখন পানি সেচে মাছ শিকারের কাজ করছেন।তিশীখালি খালের সারদানগর অংশও বিক্রি করেছেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। সেখানেও খালের পেটে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ কর্মী মানিক, আজাদুল, হারিছ ও ভুলু মিয়া মিলে খালের এই অংশ কিনেছেন।৭৫ হাজার টাকায় খালের পশ্চিমাংশ কেনার কথা স্বীকার করে মানিক উদ্দিন বলেন, খালের এই অংশ আওয়ামী লীগ নেতা পরশের কাছ থেকে কিনেছেন। নেতার কথা মতো তারা বাঁধ দিয়ে মাছ শিকারের ব্যবস্থা করছেন।এডিসি সিংড়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দুই দফায় ২০২০-২১ এবং ২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় করে হুলহুলিয়া থেকে জয়নগর বিল হয়ে সারদানগর নিয়ামত ব্রাঞ্চ পর্যন্ত খালের ৫ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হয়। পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলায় ভূ-উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এটি খনন করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল বছরজুড়ে খালের পানি ব্যবহার করে জমিতে সেচ সচল রাখা। একইসঙ্গে মাছ শিকার করবেন মৎস্যজীবীরা।খাল বিক্রির কথা স্বীকার করে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আল তৌফিক পরশ বলেন, তিনি খাল বিক্রি করেছে ঠিক। তবে টাকা ব্যবহার হচ্ছে গ্রামের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে। এখানে তার নিজের কোনো স্বার্থ নেই বলে দাবি করেন।সিংড়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহাদৎ হোসেন বলেন, মৎস্য সংরক্ষণ ও সুরক্ষা আইনে সরকারি খাল দখল শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুন বলেন, খাল বিক্রির বিষয়টি তিনি জানেনা। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।