চকরিয়ায় অতি বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ভেঙে পড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে থাকা সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি সচল করা যায়নি পক্ষকালের মধ্যেও। বন্যায় ৬২টি সড়ক কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১টি সেতু ও ১টি কালভার্ট।স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সড়ক জোড়াতালি দিয়ে কোনরকমে সিংহভাগ সড়ক যোগাযোগ সচল করলেও ৬টি সড়কে যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ৮টি বড় সড়ক মেরামত করলেও ২৭ আগষ্ট ফের ঢলের তোড়ে ৪ টি সড়ক ভেঙে গেছে। এই বন্যায় উপজেলার ৬২ টি সড়কের ২৩১ কিলোমিটারের মধ্যে ৪০.৩৮ কিলোমিটার সড়ক ও ১ টি করে সেতু ও কালভার্ট ভেঙে ৫৩ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর চকরিয়ার উপজেলা প্রকৌশলী সাফায়াত ফারুক চৌধুরী।তিনি বলেন, ‘রেকর্ড সৃষ্টি করা পাহাড়ি ঢলের স্রোতে উপজেলার এলজিইডির অধিনস্থ প্রতিটি সড়কই কমবেশি ভেঙেছে। এতে ১টি পৌরসভা ও ১৮টি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বানের পানি কমার সাথে সাথেই জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে তাদের সহায়তায় যোগাযোগ ব্যবস্থা কোনরকমে চালু রাখতে সিংহভাগ সড়ক প্রাথমিকভাবে মেরামত করা হয়। মেরামতের পর সড়ক যোগাযোগ কিছুটা চালু হতেই ফের নামে পাহাড়ি ঢল। এতে ২৭ আগস্ট আবরো ভেঙে যায় ৪টি সড়ক।’তিনি বলেন, ‘সোমবার(২৮ আগষ্ট পর্যন্ত ৬টি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সড়কগুলোর মধ্যে ১টি করে বমুবিলছড়ি ও সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নে এবং অপর ৪টি সড়ক হারবাং ইউনিয়নে। এরমধ্যে হারবাং ইউনিয়নের ৪টি সড়ক ২ দফা ভেঙেছে।উপজেলা প্রকৌশলী আরও বলেন, ‘ঢলের তোড়ে সড়ক, ব্রিজ ও কালভার্ট বিধ্বস্ত হয়ে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৫৩ কোটি টাকার। এ ক্ষতির পরিমাণ লিখিতভাবে জানিয়ে সড়কগুলো পুনরায় নির্মাণ মেরামতের মাধ্যমে পূর্বেকার অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রাক্যলিত ব্যয় ও বাজেট নির্ধারণপূর্বক বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও ব্রিজ টেকসই নির্মাণ, মেরামত করা হবে।সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বানের তোড়ে তছনছ হওয়া সড়কের করুণ দৃশ্য। কাকারা ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল ইসলাম সিদ্দিকী সড়কের এক স্থানে গভীর খাতের সৃষ্টি হয়েছে। অন্য স্থানে কার্পেটিংসহ সড়কের উপরিভাগ ভেঙে বানের স্রোতে ভেসে গেছে। একইভাবে লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, সুরাজপুর-মানিকপুর, বমুবিলছড়ি, চিরিঙ্গা, ডুলাহাজারা, খুটাখালী, সাহারবিল, ফাঁসিয়াখালী, পূর্ব বড়ভেওলা, বিএমচর, পশ্চিম বড়ভেওলা, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া ও বদরখালী ইউনিয়নের সড়কগুলো কমবেশি ভেঙে যোগাযোগে জনদূর্ভোগ সৃষ্টি হয়। এসময় হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মেহেরাজ উদ্দিন বলেন, ‘১৫ দিন আগের বন্যা পরবর্তী সম্পূর্ণ অচল সড়কগুলো জোড়াতালি দিয়ে কোনরকম সচল করা হলেও ২৭ আগস্ট আমার ইউনিয়নের ৪টি সড়ক ফের ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।’সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নগুলোর চেয়ারম্যানরা বলেন, এলজিইউডির নির্দেশনায় ও তত্ত্বাবধানে আমরা পরিষদের পক্ষ থেকে ভেঙে যাওয়া সড়কগুলো কোনরকমে চলাচল উপযোগী করেছি। তবে বড় সড়কগুলোর নাজুক অবস্থা সরকারি বরাদ্দ পাওয়ার আগে কাটানো সম্ভব নয়।চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী জানান, প্রতিটি ইউনিয়নের সড়কগুলো ঢলে কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। আপাতত যোগাযোগ চালু রাখতে বালু, মাটি দিয়ে জোড়াতালির মাধ্যমে মেরামত হলেও তা টেকসই নই। সরকারি বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, ব্রিজ নির্মাণ করে জনদূর্ভোগ লাঘব করা যাবে।