কক্সবাজারে বন বিভাগের উদ্দোগে আন্তর্জাতিক বন দিবসে র্যালী ও আলোচনা সভার মাধ্যমে মঙ্গলবার পালিত হয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ”সুস্থ শরীর সুস্থ মন, যদি থাকে সমৃদ্ধ বন”। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সারওয়ার আলম।এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে নেকম উপ প্রকল্প পরিচালক ড. শফিকুর রহমান, সাংবাদিক মো: আলী জিন্নাহ, বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দিপু, চ্যানেল আই প্রতিনিধি সরওয়ার আজম মানিক উপস্থিত ছিলেন।সহকারী বন সংরক্ষক ড. প্রান্তোষ রায়ের সঞ্চালনায় সাংবাদিক আবু সায়েম, রেঞ্জ কর্মকর্তা রিয়াজ রহমান ও সমীর রন্জন সাহা উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনা অনুষ্ঠানের আগে একটি র্যালীর আয়োজন করা হয়। দিবসটি উদযাপন করা হয় মূলত বন ও জঙ্গলযুক্ত এলাকা রক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং জনগণকে বন, বনজ দ্রব্য ও বন্য প্রাণী সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির জন্য। এসময় বক্তারা বলেন: দারিদ্র্য বিমোচনে ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বন শুধু আমাদের অক্সিজেনই সরবরাহ করে না, মানুষ, প্রাণী, পোকামাকড়, বন্য প্রাণীকে আশ্রয় দেয় এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে ও আর্দ্রতার ভারসাম্য রক্ষা করে। পৃথিবীতে জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখতে, অক্সিজেন সরবরাহ করতে, পর্যটনশিল্প বিকাশে ও শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে গাছপালা কিংবা বনভূমি।জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুসারে বিশ্বে মোট বনভূমির পরিমাণ ৪.০৬ বিলিয়ন হেক্টর। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বন উজাড় উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্যমতে, বিগত দু’দশকে পৃথিবী থেকে ১০০ মিলিয়ন হেক্টর বা ১০ লাখ বর্গকিলোমিটার বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। সেই হিসাবে প্রতিবছর ৫০ হাজার বর্গকিলোমিটার বনভূমি পৃথিবী থেকে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে পৃথিবী নামের সবুজ গ্রহে প্রাণিজগতের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।আবার পৃথিবীর ফুসফুস নামে পরিচিত আমাজন বনের অংশও প্রতিনিয়ত সাবাড় করা হচ্ছে। একশ্রেণির ভূমি খেকোরা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বনভূমির জায়গা অবৈধভাবে দখল করছে।নির্বিচারে বনাঞ্চল উজাড়ের কারণে ক্রমশ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও অনিয়মিত বৃষ্টিপাত হয়। এতে কৃষিকাজ, কৃষিজাত উৎপাদনসহ প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করবে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্য প্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করবে।’জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন প্রকৃতি ও পরিবেশপ্রেমিক। ‘কারাগারের রোজনামচা’ বই থেকে জানা যায়, তিনি নিজে বাগান পরিচর্চা করতেন।জানা যায়, বাংলাদেশে সরকার নিয়ন্ত্রিত বনভূমির পরিমাণ প্রায় ২৩ লাখ হেক্টর, যা দেশের মোট আয়তনের প্রায় ১৫.৫৮%। এর মধ্যে বন অধিদফতর নিয়ন্ত্রিত বনভূমির পরিমাণ প্রায় ১৬ লাখ হেক্টর, যা দেশের আয়তনের প্রায় ১০.৭৪%। সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম এবং জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে বর্তমানে বাংলাদেশের বৃক্ষ আচ্ছাদিত ভূমির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দেশের মোট আয়তনের ২২.৩৭% এ উন্নীত হয়েছে। যা ২০২৫ সালের মধ্যে ২৪% এর বেশি উন্নীত।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য ২০১৫ সালে জাতিসংঘের চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ পুরস্কারে ভূষিত হন। বন সংরক্ষণ ও জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বর্তমান সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়।জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করলে অবাধে যত্রতত্রভাবে বৃক্ষনিধন বন্ধ হবে। আসুন,আমরা বন রক্ষার্থে বেশি বেশি গাছ লাগাই এবং পরিবেশ ও বন রক্ষার্থে মানুষকে সচেতন করি। বন দিবস পালন তখনই সার্থক হবে, যখন আমরা নিজ থেকে বনের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারব।