চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ ঘূণিয়া ৫নং ওয়ার্ড এলাকায় দিবারাত্রি সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির সরকারি গাছ কাটছে সংঘবদ্ধ গাছ চোর সিন্ডিকেট। গত ১মাস যাবত প্রায় ১ হাজারের অধিক আকাশমনি ও বেলজিয়ামসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কর্তন করে এ গাছ চোর সিন্ডিকেট। এ ঘটনায় স্থানীয় উপকারভোগীরা ক্ষোভে ফুঁঁসে উঠেছেন। সরেজমিন পরিদর্শনের পর স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ একমাস যাবত ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ ঘূণিয়া ৫নং ওয়ার্ড এলাকার শের আলীর ছেলে হামিদুল হক ও মৃত আমির হামজার ছেলে মোঃ মকছুদ আহমেদের নেতৃত্বে একই এলাকার মৃত হাজী আবদুল গণির ছেলে শাহা আলম, মোঃ কালুর ছেলে মোঃ মোস্তাক আহমেদ, মৃত আব্দু শুক্কুরের ছেলে আব্দুল মালেক প্রকাশ সোনা ফকির, নুরুল কবিরের ছেলে জয়নাল আবেদীন, আক্তার আহমেদের ছেলে মাহমুদ, নুরুল আমিন সহ আরো ১০/১২ জনের সংঘবদ্ধ গাছ চুর সিন্ডিকেট মিলে দিবারাত্রি ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের রিংভং বনবিটের আওতাভুক্ত সামাজিক বনায়নের গাছ কর্তন করে আসছিলো। তারা ঐ এলাকার প্রভাবশালী গাছ চোর সিন্ডিকেট হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যাপারে কেউ প্রতিবাদ করলে প্রাণনাশের হুমকিসহ বিভিন্নভাবে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও প্রদর্শন করে বলে জানান তারা। এমনকি উপকার ভোগীদের মধ্যে কেউ কেউ জোরালো প্রতিবাদ করলে গাছ চোর সিন্ডিকেটের সদস্যরা গাছ কেটে উল্টো স্থানীয় বনবিটে গিয়ে উপকারভোগীরা গাছ কেটে ফেলতেছে বলে অভিযোগ করে তারা উপকারভোগীদের ফাঁসানোর চেষ্টা করে। এদিকে পুরো একমাস এভাবে চলার পর সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীরা ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন হেলালীর কাছে অভিযোগ করলে গত ২৮ জানুয়ারি সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে সেসব উপকারভোগীদের সামাজিক বনায়ন পরিদর্শনে যায় চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন হেলালী”র নেতৃত্বে মহিলা এমইউপি রোজিনা আক্তার, গ্রাম পুলিশ সাহেদুল ইসলাম, ফরিদুল ইসলাম, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মৌলভী গিয়াস উদ্দিন, হাসনাত মোঃ রুবেল, রিদুয়ানুল হক, নাঈমুল সিকদারসহ একটি পরিদর্শক টিম। পরে সরেজমিন পরিদর্শন করার পর সাংবাদিকরা চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন হেলালীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন উপকারভোগীর প্রায় ২৫ হেক্টর সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে নিয়ে গেছে গাছ চোর সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এমনকি তিনি আরো জানান, উপকারভোগীদের সামাজিক বনায়নের গাছ লুট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগের পর সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে তখনও হামিদ ও মকছুদের নেতৃত্বে গাছ চোর সিন্ডিকেটের সদস্যরা গাছ কর্তন করতে দেখতে পান। পরে চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন হেলালী স্থানীয় বনবিটের বিট কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে অবগত করে। পরে খবর পেয়ে বিট কর্মকর্তা সমূহ স্থানে বনকর্মী জামালের নেতৃত্বে একটি আভিযানিক দল ঘটনাস্থলে পাঠালে বিভিন্ন বাড়ি ও রাস্তা থেকে ২ ট্রাক গাছ জব্দ করে বনবিটে নিয়ে যায়। এদিকে, অভিযানের সময় উপস্থিত উপকারভোগীদের মধ্যে আজিজুর রহমান, সেলিম বেলালী, কপিল উদ্দিন, ফরিদুল আলম, নেজাম উদ্দিন ও শাহিনা আক্তারসহ অন্যান্য উপকারভোগীরা জানান, বনবিভাগের সংশ্লিষ্ট কাউকে না জানিয়ে প্রায় ২৫ হেক্টর সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে ফেলেন এবং বন বিভাগের অনুমতি না নিয়েই তারা এ কাজ করেছেন বলে দাবী তাদের। এসময় তারা আরো বলেন, গাছ চোর সিন্ডিকেটদের গাছ কাটতে বাধা দিলেও তারা বাধা না মেনেই এসব গাছ কর্তন করেছে।
স্থানীয় অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সামাজিক বনায়নের বড় এবং ভালো মানের অনেক কাঁচা গাছ গত একমাস ধরে কাটতে দেখছেন। গাছগুলো কাটতে কারো অনুমতি ছিল কি-না তারা তা জানতেন না। কাটা এসব গাছের বড় বড় গোড়ালি পড়ে থাকতে দেখা গেছে। স্থানীয় এলাকার গরীব লোকেরা গাছের এসব গোড়ালি জ্বালানি কাঠ হিসেবে তুলে নিচ্ছেন। আর সামাজিক বনায়নের কর্তনকৃত গাছগুলো যাচ্ছে তামাক চুল্লীতে। অন্যদিকে, অভিযান পরিচালনা করে গাছ জব্দ করার পর ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের রিংভং বনবিটের বনকর্মী জামালের কাছে সাংবাদিকরা সামাজিক বনায়নের গাছ কর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা অভিযান পরিচালনা করে ২ট্রাক গাছ জব্দ করেছে। তবে এখনো পর্যন্ত এ দুই ট্রাক গাছে কত ঘনফুট হবে তা মেপে দেখা হয়নি। স্থানীয় আলমগীর নামের এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে বাড়ির তালা ভেঙে ১৩ ঠুকরা ও রাস্তা থেকে এসব গাছ উদ্ধার করা হয়। অপরদিকে রিংভং বনবিটের বিট কর্মকর্তা মোঃ কামরুল হাসানের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের বরাত দিয়ে খবর পেয়ে সমুহ স্পটে বনকর্মীদের একটি আভিযানিক দল ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় এবং সেখান থেকে কিছু গাছ জব্দ করা হয়। দ্রুত সামাজিক বনায়নের গাছ কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে বন আইনে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।