সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরি নদীর অন্তত ৩০টি পয়েন্ট থেকে প্রায় ২০০টি শ্যালোমেশিন ও ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীর পাড়সহ কবরস্থান, শসানঘাট, ফসলি জমি ও গ্রামীণ সড়ক ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। সরকারি দলের নেতাকর্মীদের নাম ভাঙিয়ে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলতে জমির মালিকরা বাধা দিলে মারধরের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন একাধিকবার সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি ও অভিযান পরিচালনা করার পরও কোনো কর্ণপাত না করে বালুখেকোরা তাদের মতো করে মাতামুহুরি নদী থেকে শ্যালোমেশিন ও ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন করেই যাচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মছনিয়াকাটা এলাকায় শেখ হাসিনা বানৌজা সড়ক ও ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মাণাধীন রেল লাইনের পাশে বনবিভাগের জায়গা থেকে শ্যালোমেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছে ঐ এলাকার ফরিদ উদ্দিন ও মহি উদ্দিন প্রকাশ ডাকাত মহি উদ্দিন নামের দুই প্রভাবশালী ব্যাক্তি। এ অবৈধ বালু উত্তোলনের পানি সড়ক দিয়ে গড়িয়ে পড়ার কারণে শেখ হাসিনা বানৌজা সড়ক ও রেললাইনের পাড় ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এছাড়া বনবিভাগের পাহাড় থেকে শ্যালুমেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে পাহাড় সমতলে পরিণত হয়ে বালু খেকোদের দখলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বনবিভাগের পাহাড় থেকে শ্যালোমেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতে বারবাকিয়া রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার হাবিবুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে পহরচাঁদা বনবিটের পিএম শামসুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি রহস্যজনকভাবে তা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেেন। পরে অনুসন্ধানে জানা যায়, পহরচাঁদা বনবিটের পিএম শামসুল হকের নেতৃত্বেই ধ্বংস হচ্ছে বনবিভাগের জায়গা। কোন রকম শামসুল হককে অল্প টাকার মাধ্যমে ম্যানেজ করতে পারলেই বালু খেকো ও ভূমিদস্যুরা দখলে নিয়ে নিতে পারে এসব জায়গা। এছাড়াও চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের ছিকলঘাট-কৈয়ারবিলের সড়ক লাগোয়া এলাকায় ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের ছিকলঘাট-কৈয়ারবিল সড়ক লাগোয়া সামনের অংশে ওই বালু মহাল তৈরি করছে বালু খেকোরা। সেখান থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। এতে করে সদ্য নির্মিত ছিকলঘাট-কৈয়ারবিল সড়কের সলিং কার্পেট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের মন্ডলপাড়া এলাকার একাধিক কৃষক বলেন, বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে তাদের ফসলি জমি। বিষয়টি মৌখিকভাবে ড্রেজার ব্যবসায়ীদের জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি বরং এসব বিষয়ে কোনো প্রকার বাড়াবাড়ি করলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রভাবশালী আওয়ামিলীগ নেতাদের লোকজন। সব সময়ই ড্রেজার ও শ্যালোমেশিন দেখাশোনার জন্য ৭-৮ জন লোক ড্রেজারের আশেপাশে থাকে বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় কৃষকেরা।এদিকে কোনাখালী ইউনিয়নের চিত্রও একই। স্থানীয় এমইউপি ইফতেখার বকুল সহ কয়েকটি সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে সরকারি নিষেধাজ্ঞার কোনো তোয়াক্কা না করেই দেদারসে নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইফতেখার বকুল বলেন, তারা সরকারকে রাজস্ব দিয়েই বালু উত্তোলন করছে। তখন প্রতিবেদক সরকারিভাবে বালি উত্তোলনের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও তারা কীভাবে সরকারি রাজস্ব দিচ্ছেন তা জানতে চাইলে তিনি তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।এছাড়াও চকরিয়া উপজেলা পূর্ব বড় ভেওলা, সাহারবিল, বদরখালী, পশ্চিম বড় ভেওলা, ফাঁসিয়াখালী, বিএমচর ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে ও দেদারসে চলছে অবৈধ বালু খেকোদের উৎপাত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান বলেন, অবৈধভাবে শ্যালোমেশিন বা ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কোন সুযোগ নেই।অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনের অভিযান চলছে এবং চলমান থাকবে।