চকরিয়া-লামা উপজেলার সীমান্ত এলাকা ফাইতং ইউনিয়নের মধ্যম নয়াপাড়া ৬নং ওয়ার্ড এলাকায় ২০২৩সনের সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৭০০ কেজি পাঠ্যবই ভাঙ্গারীর দোকানে বিক্রি করার সময় আটক করে স্থানীয় জনতা।পরে লামা ও চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও পুলিশ প্রশাসনকে বিষয়টি স্থানীয়রা অবগত করলে ঘটনাস্থলে গিয়ে এসব বই জব্দ করেন। গতকাল (১৮ই জুন) রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ভাঙ্গারীকে বিক্রিকালে ১৬৯ কেজি এবং বিকেল ৩টায় উপজেলা প্রশাসন, ফাইতং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জসহ সঙ্গীয় পুলিশ সদস্য, সাংবাদিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে একটি বাসা বাড়ির তালা ভেঙে অভিযান চালিয়ে মজুদকৃত আরো ৫৩১ কেজি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যবই জব্দ করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন লামা উপজেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এস এম রাহাতুল ইসলাম ।সরেজমিন জানা যায়, লামা-চকরিয়া সীমান্তের ফাইতং এলাকায় বাদল কান্তি দে নামক এক ব্যক্তির মালিকানাধীন ভাড়াবাড়ি থেকে কৈয়ারবিল ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকে মাত্র ৯৯ভোট পেয়ে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী জান্নাতুল বকেয়া রেখা নামের এক মহিলা ২০২৩ইং সালের মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণীর নতুন ১৬৯ কেজি পাঠ্যবই বিক্রয় করে সুমন (২৬) নামের এক ভাঙ্গারী ব্যবসায়ীকে। পরে ক্রয়কৃত পাঠ্যবইগুলো বানিয়ারছড়া স্টেশন নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় জনতা হাতেনাতে আটক করে। পরে খবর পেয়ে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে উপস্থিতি টের পেয়ে জান্নাতুল বকেয়া রেখা বাসায় তালা দিয়ে পালিয়ে যায়।এসময় সাংবাদিকরা ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে ওই ভাড়াবাড়ি’তে গেলে জান্নাতুল বকেয়া রেখা প্রথমে বলে আমি বিক্রি করেছি আপনারা বসেন। বসার পর তিনি সাংবাদিকদের অনৈতিকভাবে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু নাছোড়বান্দা সাংবাদিকরা তার কথামতো ম্যানেজ না হলে তিনি দাম্ভিকতার সাথে বলেন আমি বই বিক্রি করেছি তাতে তোমাদের কী? তোমরা যা পারো করো বলে আর কোনো রকম কথা উত্তর দেয়নি তিনি। ঐসময় সাংবাদিকরা তার বাড়ি’তে বিক্রির চাইতে আরো অধিক বেশি পাঠ্যবই দেখতে পায়।জান্নাতুল বকেয়া রেখা নামে মহিলার বাড়ি চকরিয়া কৈয়ারবিল ইউনিয়নে। তিনি কৈয়ারবিল পাহাড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বলেও জানা গেছে।স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, আজিজ নামে জন্নাতুল বকেয়া রেখার একজন ভাই রয়েছে এনএসআই যুগ্ম মহাপরিচালক পদে। রেখার নানান কাজকর্মে তার ভাইকে ব্যবহার করে থাকেন।ফাইতং ইউপি চেয়ারম্যান মো. ওমর ফারুক বলেন, ঘটনাস্থল লামা ফাইতং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড নয়াপাড়া এলাকায় পড়েছে। তবে বই গুলো কোন স্কুলের তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সঠিক তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় এলাকাবাসী বলেন, এইসব বই ফাইতং ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের হতে পারে। গভীরভাবে তদন্ত করলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।ফাইতং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোঃ শামীম শেখ বলেন, জব্দকৃত বই গুলো মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য়, ৬ষ্ট, ৭ম ও ৮ম শ্রেণির। বই গুলো ২০২৩ সালের নতুন বই। কিভাবে এত বই কালোবাজারে আসছে বা জান্নাতুল বকেয়া রেখা’র কাছে এসেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ভাঙ্গারী ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। জব্দকৃত বই ও ব্যবসায়ীকে লামা থানায় পাঠানো হয়েছে।লামা উপজেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এস এম রাহাতুল ইসলাম বলেন, ফাইতং ইউনিয়ন থেকে এক ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী ভ্যানে করে চকরিয়া পাচারকালে স্থানীয় জনতা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৬৯ কেজি সরকারি বই জব্দ করে পুলিশকে খবর দেয়। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে ওই ভাঙ্গারী ব্যবসায়ীকে আটক করে। এসময় আটক ভাঙ্গারী ব্যবসায়ীর দেয়া তথ্যমতে ফাইতং পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশের এসআই জুনাইদ হাসান, এস আই মাসুদ সহ সঙ্গীয় পুলিশ নিয়ে অভিযান চালিয়ে নয়াপাড়া এলাকার বাদল কান্তি দে এর ভাড়া বাড়ি হতে আরো ৫৩১ কেজি পাঠ্যবই জব্দ করে। বই গুলো জান্নাতুল বকেয়া রেখা নামে এক ভাড়াটিয়া মহিলার রুম থেকে জব্দ করা হয়। প্রশাসন ও সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে ওই মহিলা পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় নিয়মিত মামলা রুজু করতে পুলিশকে বলা হয়েছে বলে জানান।