বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন মো. সাহাবুদ্দিন। সোমবার (২৪ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে বঙ্গভবনের ঐতিহাসিক দরবার হলে এ শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হয়। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তাকে (সাহাবুদ্দিন) রাষ্ট্রপতির পদে শপথ পাঠ করান।শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যসহ কয়েকশ বিশিষ্ট অতিথি যোগ দেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। শপথ গ্রহণের পরপরই কার্যভার গ্রহণ সংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। মুক্তিযোদ্ধা ও মাঠপর্যায়ের রাজনীতিবিদ মো. সাহাবুদ্দিন ২১তম রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত হলেন। রাষ্ট্রপতি হামিদ সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসাবে ৪১ দিনসহ টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১০ বছর ৪১ দিন অতিবাহিত করেন।স্বাধীনতার পর থেকে ১৭ জন ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে এর মধ্যে মো. আবদুল হামিদই প্রথম ব্যক্তি, যিনি পরপর দুইবার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করার প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন।মুক্তিযোদ্ধা ও মাঠপর্যায়ের রাজনীতিবিদ মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা শহরের শিবরামপুরের জুবিলী ট্যাংকপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম শরফুদ্দিন আনছারী, মা খায়রুন্নেসা। তার ছোটবেলা কেটেছে পাবনা শহরেই। শহরের পূর্বতন গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে রাধানগর মজুমদার একাডেমিতে ভর্তি হন চতুর্থ শ্রেণিতে। সেখান থেকে ১৯৬৬ সালে এসএসসি পাসের পর পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হয়ে জড়িয়ে পড়েন ছাত্র রাজনীতিতে। এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২ সালে) বিএসসি পাস করে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ আহ্বানে ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত অনেকবার বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য লাভ করেন তিনি। ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের পদে থাকা মো. সাহাবুদ্দিন মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ছাত্রলীগের সক্রিয় কাজের ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। ১৯৭২ সালে পাবনার নগরবাড়ী ঘাট জনসভা এবং পাবনা স্টেডিয়ামের জনসভায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সাহাবুদ্দিনের বক্তব্য শুনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে বুকে জড়িয়ে আশীর্বাদ করেন এবং হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে আসেন।মো. সাহাবুদ্দিন পাবনা জেলার আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সভাপতি এবং পাবনা জেলা বাকশালের যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হিসাবে মাঠপর্যায়ের রাজনীতিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। ছেষট্টির ৬-দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠিত হলে তিনি পাবনা জেলা কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মনোনীত হন।পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন তিনি। ওই সময় সামরিক স্বৈরশাসকদের রোষাণলে ব্যাপক নির্যাতনের পাশাপাশি তিন বছর জেল খাটেন। কারামুক্তির পর পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। শুরুর দিকে পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন সাহাবুদ্দিন। ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) পরীক্ষা দিয়ে বিচারক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুইবার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন তিনি। বিচারালয়ে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন শেষে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে ২০০৬ সালে অবসরে যান মো. সাহাবুদ্দিন। এর মধ্যে শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান পদেও দায়িত্ব পালন করেন।