বনবিভাগের জমিতে সামাজিক বনায়ন ছাড়া কোনো কিছুই করার বিধান নেই। তবুও চকরিয়া উপজেলার বেশিরভাগ সংরক্ষিত বনভূমির জমি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মিলছে। আর সেই জমিতে আধা-পাকা ঘর বা দালান করতে বন বিভাগের বিট কর্মকর্তাকে দেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। এ কারণে ওই উপজেলায় দিন দিন বন বিভাগের জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। এই সুযোগে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বনের গাছ কেটে জমি দখল নিয়ে গড়ে তুলছেন ঘর-বাড়ি। সরেজমিন চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পাহাড়পাড়া গ্রামে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা যায়। চারিদিকে বড় বড় পাহাড়ের টিলা আর সারি সারি গাছ এবং তার ভেতরে নতুন নতুন ঘর-বাড়ি। শতশত নতুন নতুন টিনের ঘর আর দালানে ভরে গেছে পুরো বনভূমির জায়গা। দেখলেই মনে হয় এ যেন নতুন একটি গ্রাম! না, এটি কোন গ্রাম নয়। এটি বন বিভাগের সংরক্ষিত বনভূমি। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বন বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে টাকার বিনিময়ে জমিগুলো সামাজিক বনায়নের নামে দখলে নিয়ে সেখানে নির্মাণ করছেন বড়বড় দালান ও আধাপাকা ঘরবাড়ি। এতে করে সামাজিক বনায়নের নাম করে দিন দিন দখল হয়ে যাচ্ছে শতশত একর বনভূমি। কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পাহাড়পাড়া এলাকায় বনের ভেতর চোখ যেতেই দেখা যায় নির্মাণাধীন এক পাকা ভবন। বাড়িটির পুরো কাজ সম্পন্ন হলেও বাকি রয়েছে শুধু ছাঁদ ঢালাইয়ের কাজ। পাহাড়ের উপর সেই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণাধীন পাকা ভবনের অপর পাশে রয়েছে মাটির ঘরসহ একাধিক আধা পাকা ও টিনের ঘর। বাড়িতে অপরিচিত লোক এসেছেন দেখে এগিয়ে আসেন এক নারী। বাড়িটি কার জিজ্ঞেস করলেই উত্তরে তিনি জানান, বাড়িটি তার ছেলে কাউছার উদ্দিনের। তার পিতার নাম আব্দুল মোতালেব। বন বিভাগের জায়গায় ঘর তুলেছেন কেন জানতে চাইলে তিনি জানান, থাকার জায়গা নেই। তাই এই জমিটি ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের অধীনে নলবিলা বনবিট কর্মকর্তা ও বনকর্মীদের ম্যানেজ করে নেওয়া হয়েছে। তা না হলেতো ঘর তুলতে দেয় না। এসময় সাংবাদিকরা বনবিভাগের জায়গাতে কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করার এখতিয়ার না থাকা স্বত্ত্বেও কেন বনবিভাগের লোকজনকে ম্যানেজ করে সেখানে বাড়ি নির্মাণ করছেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি সাংবাদিকদের কর্কশ কণ্ঠে বলেন, এ এলাকাতে পাকা, আধা পাকা ও টিনের অন্তত ১০০টির অধিক বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে এসময়তো এমন কোন প্রশ্ন আসেনি আমার বেলায় কেন এতো প্রশ্ন এবং এতো আইন? আমি আপনাদের এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না। আমি বনবিভাগকে ম্যানেজ করেই বাড়ি নির্মাণ করতেছি। তাই এখানে এতো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। তিনি এসময় আরো বলেন, আমার বেলায় যদি এতো প্রশ্ন এবং আইনের প্রসঙ্গ আসে তাহলে অন্যদের বেলায় কেন তা নয়? এমন আইন যদি থেকে থাকে তাহলে সবার জন্য তা সমান হতে হবে। অন্যদিকে তার এমন কথার ভিত্তিতে সাংবাদিকরা সরেজমিন এলাকাটি ঘুরে দেখতে পায়, বনবিভাগের জমি দখল করে তার কথা মতো ১০০টির অধিক পাকা, আধা পাকা ও টিনের বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এবং এসব বাড়ি নির্মাণ করতে কাটা হয়েছে পাহাড়ের টিলা ও বনজ এবং ফলজ গাছপালা। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে এভাবেই সরকারি জমি প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছেন। আবার সেখানে ঘর-বাড়ি নির্মাণও করছেন। এভাবে চলতে থাকলে পুরো বন উজাড় হয়ে যাবে। এ বিষয়ে ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের অধীনে নলবিলা বনবিট কর্মকর্তা অবনী কুমার রায় এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বা তার কোন বনকর্মী টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ হয়ে বনবিভাগের জমিতে বাড়ি নির্মাণ করতে দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। এমন যদি কেউ বলে থাকে তাহলে এটি কেবল তার মনগড়া বক্তব্য ছাড়া কিছু নয়। এসময় তিনি আরো বলেন, উল্লেখিত বনভূমিটি তাদের অধীনে নয়। এ এলাকাটি চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের আওতাধীন। এরপরও বনবিভাগের জায়গা হওয়ায় তারা এ জায়গাটির রক্ষণাবেক্ষণ করেন। অন্যদিকে, নলবিলা বনবিট কর্মকর্তা অবনী কুমার রায় টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ হয়ে বনভূমিতে বাড়ি নির্মাণ করতে দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করার পর সাংবাদিকদের কাছে, টাকার বিনিময়ে বিট কর্মকর্তা ও বনকর্মীদের ম্যানেজ করে বনভূমিতে পাকা বাড়ি নির্মাণ করছে মর্মে এমন একটি ভিডিও বিট কর্মকর্তাকে দেখালে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।