কুমিল্লার দেবিদ্বারে খালের পানি থেকে মাছ ধরার বেড়জালের বাঁশ না তোলায় এক গৃহবধূকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে বুধবার (২৬ অক্টোবর) রাতে সাড়ে ১১ টার দিকে দেবিদ্বার থানা পুলিশ ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় পুলিশ শাশুড়ি জুলেখা বেগমকে আটক করেছেন। তবে অপর অভিযুক্ত শ্বশুর দুলাল মিয়া ও ননদ মৌসুমীকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। গতকাল বুধবার বিকেলে দেবিদ্বার উপজেলার ধামতী ইউনিয়নের (উত্তরপাড়া) কোরেরপাড় এলাকায় দুলাল মিয়ার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।অভিযুক্ত শ্বশুর দুলাল মিয়া পেশায় একজন কসাই। বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) বিকালে নির্যাতনের শিকার জোৎসনা বেগম শ্বশুর, শাশুড়ি ও দুই ননদের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গেলে শত শত এলাকাবাসী জড়ো হয়। প্রথমে কেউ ভয়ে মুখ খুলতে না চাইলেও পরে একে একে সবাই গৃহবধূ জোৎসনাকে নির্যাতনের বর্ণনা দেন। এ সময় তারা এ ঘটনায় অভিযুক্ত (কসাই) দুলাল ও দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন।স্থানীয় চৌকিদার আবুল হাশেম বলেন, ‘‘নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ জোৎসনা ‘বাঁচাও বাঁচাও বলে আর্তনাদ করেছে, তবুও ভয়ে সামনে কেউ এগিয়ে আসেনি’ এসময় তাদের বাড়ির গেইট ও দরজা সব বন্ধ ছিল, কেউ ভেতরে যেতে পারেনি।প্রতিবেশী ও প্রত্যক্ষদর্শী আমির হোসেন, শরীফ ও সোহেল মিয়া বলেন, ‘১৮ বছর আগে উপজেলার গুনাইঘর গ্রামের সুজাত আলীর মেয়ের সঙ্গে ধামতি গ্রামের (উত্তরপাড়া) কোরের পাড় (কসাই) দুলাল মিয়ার ছেলে হেলাল মিয়া বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জন্ম হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামী হেলাল তার মা-বাবা ও বোনেরা যৌতুকের জন্য তাকে পাশবিক নির্যাতন করে চালাত। কয়েক দফায় দেড় লক্ষ টাকা যৌতুক দিয়েছে জোৎসনা। এরপরও তারা আরও টাকা দাবি করেন। পরে জোৎসনার বাবা সুজাত আলী মারা যাওয়ায় অসহায় হয়ে পড়ে জোৎসনার ভাইয়েরা। তাদের পক্ষে আর যৌতুক দেয়া সম্ভব না বলায় বিভিন্ন সময়ে জোৎসনাকে মারধর করেছে। গত ৩ বছর আগে হেলাল ওমানে চলে যান। সেখান থেকেও হেলাল তার মা-বাবাকে নির্দেশ দিত জোৎসানাকে মেরে গুম করে ফেলতে। বুধবার বিকালে গলাসমান পানি থেকে বেড়জালের বাঁশ তোলায় তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করেছে। তাদের যারা বাধা দিতে যায় তাদেরকেও গালিগালাজ করে। এজন্য কেউ এগিয়ে যায়নি।’নির্যাতনের গৃহবধূর মা ফরিদা বেগম ও ছোট ভাই মো. জামাল হোসেন বলেন, ‘শ্বশুর দুলাল মিয়া, শাশুড়ি জুলেখা বেগম, ননদ মৌসুমী ও পাখি যৌতুকের জন্য প্রায়ই জোৎসনাকে মারধর ও নির্যাতন করত। তবুও এতো বছর সংসার করেছে। ঘটনার দিন গলা সমান খালের পানি থেকে বেড়জালের বাঁশ না তোলায় আমার বোনকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করেছে। আমরা থানায় এসেছি এ ঘটনায় মামলা দায়ের করব।’এ ব্যাপারে ওমান থেকে জোৎসনার স্বামী হেলাল মিয়া মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে জানান, জোৎসনা ফাঁসি ও বৈদ্যুতিক তারে শক খেতে ছোটাছুটি করায় তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলতে বলেছি।অভিযুক্ত শাশুড়ি জুলেখা বেগম ও ননদ মৌসুমী বেগম বলেন, ‘খাল থেকে বেড়জালের বাঁশ তুলতে বলায় জোৎসনা পারবে না বলায় একটি চড় দেওয়া হয়। পরে সে রাগে ফাঁসি দিতে গেলে তাকে আটকে গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলা হয়। আমরা কেউ তাকে মারধর করিনি।ধামতি ইউপি চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন মিঠু বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। বিষয়টি খুবই বর্বর ও পাশবিক। এলাকার লোকজন আমার কাছে নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও পাঠিয়েছে। নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূর আইনগত ব্যবস্থা নিতে যা যা প্রয়োজন আমি সহযোগিতা করব।’ এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে তিনি।এ ব্যাপারে দেবিদ্বার থানার ওসি কমল কৃষ্ণ ধর বলেন, ‘এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার ওই নারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। দ্রুত বাকি আসামিদের গ্রেফতার করা হবে।