১৬ ডিসেম্বর বিয়ে ইসরাত জাহান তামান্নার (২৩)। তাই পরিবারে চলছে কেনাকাটা, প্রস্তুতি। একই অবস্থা প্রবাসী বর শাহেদের বাড়িতেও। বিয়ে করবে বলে বুধবারই দেশে ফিরেছিলেন শাহেদ। কিন্তু বিমান বন্দরে নেমেই শুনতে পান সেই মর্মান্তিক ঘটনা। তার হবু স্ত্রী তামান্না আর নেই! এই খবরে বর শাহেদ যেমন ভেঙে পড়েন তেমনি হাহাকার শুরু হয় তামান্নার বাড়িতেও। মহূর্তেই দুটি বিয়ে বাড়িতে নেমে আসে শোকের ছায়া। স্বপ্ন ভঙ্গ হয় দুটি পরিবারের। হতভাগ্য তামান্নার বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নের মাদামবিবিরহাট জাহানাবাদ গ্রামে। তিনি ঐ এলাকার মোঃ দিদারুল আলমের মেয়ে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি তামান্নার সাথে বিয়ে ঠিক হয় নগরীর বলিরহাট এলাকার আব্দুর রহিমের ছেলে মোহাম্মদ সাহেদের। আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিয়ের দিন ধার্য্য হয়। সে হিসেবে খুব বেশি দিন নেই। ইতিমধ্যে দুই পরিবারেই কেনাকাটাসহ প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ভাড়া করা হয়েছে কমিউনিটি সেন্টারও। এরই মধ্যে কিছুদিন আগে হঠাৎ তামান্নার গায়ে জ্বর দেখা দেয়। জ্বর কমছিলো না কিছুতেই। দিন দিন তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকলে স্থানীয় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করানো হয়। তাতে তার শরীরে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। পরে তাকে নগরীর একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করনো হয়। কিন্তু সেখানে তার শারীরিক অবস্থা দিন দিন অবনতি হতে থাকলে অন্য আরেকটি একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। সেখানে দুইদিন আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (২০ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬ টার দিকে সে মারা যায়। তার এ অকাল মৃত্যুর খবরে এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। এদিকে যে তামান্নাকে স্ত্রী হিসেবে ঘরে তুলে নিতে প্রবাস থেকে দেশে ফিরেছিলেন বর শাহেদ, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তিনি তাকে পেলেন লাশবাহী ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সে। আর বৃহস্পতিবার বিকালে তামান্নার শেষ বিদায়ের যাত্রী হতে হলো তাকে! ইসরাত জাহান তামান্নার মামা শাহেদ মিয়া বদি বলেন, আমরা ভাগনীকে বৌ সাজিয়ে দেবার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম আমরা। লাল বেনারসি পরে সে স্বামীর ঘরে যাবার কথা। কিন্তু কি হয়ে গেল এখন! আমার আদরের ভাগ্নিকে আজ (বৃহস্পতিবার) শেষ বিদায় দিলাম আমরা। এখনো মনে হচ্ছে যেন সব কিছু মিথ্যা। এমন তো হতেই পারে না। তার জ্বর হয়েছিলো। ভাবলাম ভালো হয়ে যাবে। জ্বর কমেও গিয়েছিলো দুয়েকদিন আগে। কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে ইনজেকশন দিয়েই গেছেন। এসব ইনজেকশনের সাইড এফেক্টে আমরা ভাগনির অকাল মৃত্যু হতে পারে বলে মনে করছি আমরা। এরকম মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তামান্নার অন্যান্য স্বজনরাও। কাঁদতে কাঁদতে বাকশক্তি যেন হারিয়ে ফেলেছেন তার মা-বাবা। যেসব স্বজন ও প্রতিবেশিরা তামান্নার বাড়িতে এসেছেন এসব দৃশ্য দেখে পরস্পরকে সান্তনা দেবার ভাষা হারিয়ে তারাও নির্বাক।