যখন বিশ্বে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি দিয়ে হাল চাষ হচ্ছে। তাছাড়া বর্তমান ট্রাক্টরের যুগে গরুর হাল চোখে পড়ে না বললেই চলে। সেখানে ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ বিরল ঘটনা।দীর্ঘকাল ধরে যুদ্ধক্ষেত্রের পাশাপাশি মালপত্র বহন ও মানুষের বাহনে ঘোড়া ব্যবহৃত হয়ে এলেও কালের পরিক্রমায় তা বিলুপ্তির পথে। সেখানে গরুর বদলে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন কৃষক তাল্লুইকা।টাঙ্গাইলের সখীপুরের যাদবপুর ইউনিয়নের বেড়বাড়ি গ্রামে দরিদ্র এ কৃষককে বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে সড়কের পাশে জমিতে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করতে দেখা গেছে। কৃষক তাল্লুইকা জানান, বাজারে গরুর চেয়ে ঘোড়ার দাম অনেক কম। বাজারে গরুর দাম বেশি। তিনি কয়েক বছর আগে ১১ হাজার টাকা দিয়ে ঘোড়া কিনেছিলেন। বছরের দুইটি ইরি-বোরো ও আমনের মৌসুমে ঘোড়া দিয়ে টানা জমি চাষ করে থাকেন। নিজের জমির পাশাপাশি টাকার বিনিময়ে অন্যের জমিতেও হালচাষ করছেন তিনি।তিনি জানান, এবার তিনি জমি বর্গা নিয়ে ছয় পাকি (৫৬ শতাংশে এক পাকি) জমি আবাদ করেছেন। অন্যের জমিতে শুধু হালচাষ তিন হাজার ও মই দিতে ১৫০০ টাকা নিয়ে থাকেন। এভাবেই ২০ বছর চলছে কৃষক তাল্লুইকার ঘোড়া দিয়ে চাষবাস।তাল্লুইকা জানান, গরুর চেয়ে ঘোড়া বেশি হাঁটে। ফলে একই সময়ে তিনগুন বেশি জমি চাষ করা যায়। একদিনে তিন বিঘা জমিতে হালচাষ করা যায়। প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু করে বিকেল পর্যন্ত জমি চাষ করে দৈনিক ১৫শ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেন। প্রতিদিন ঘোড়ার খাদ্য বাবদ খরচ হয় ৪০০ টাকা। বাকি টাকা দিয়ে চার সদস্যের পরিবারের মৌলিক চাহিদাগুলো মিটছে। জমি চাষ মৌসুম শেষে ঘোড়া দিয়ে গাড়ি চালান তিনি। অর্থাৎ বিভিন্ন মালামাল পরিবহন করেন।তাল্লুইকার ভাষ্য, তিনি দারুণ অভাব অনটনে দিন যাপন করছেন। অর্থের অভাবে তিনি ট্রাক্টর কিনতে পারেন না। জমি জমা তেমন নেই। সংসারের হাল ধরে রাখতে ঘোড়াটিই তার একমাত্র অবলম্বন। স্থানীয় কয়েকজন জমির মালিক জানান, ঘোড়া দিয়ে হাল দিলে জমি গভীরভাবে খনন হয়। সেই সঙ্গে মই দেওয়ার সময় জমির উঁচু-নিচু ভালোভাবে সমান হয়। এতে জমিতে পানি ধরে রাখা সহজ হয়। এছাড়া একদিনে অনেক বেশি জমিতে হালচাষ করা যায় বলে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হয়।স্থানীয় যাদবপুর ইউপি চেয়ারম্যান একেএম আতিকুর রহমান বলেন, তাল্লুইকা একজন পরিশ্রমি কৃষক। এলাকার চাষীদের কাছে তার ঘোড়ার হালচাষ ও মইয়ের বেশ চাহিদা রয়েছে।