বালি খেকোদের আগ্রাসনে ক্ষত-বিক্ষত চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ছড়াখালের বুক ও ফসলি জমি। ফাঁসিয়াখালী ছড়াখাল ও ফসলি জমি থেকে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে ছড়াখালের পাড় বা ফসলি জমিতে পানি মারার পর পাড় ভেঙে শরবত বানিয়ে সেখান থেকেই বালিখেকোরা বালি উত্তোলন করে যাচ্ছে অবিরাম। প্রতিদিন তোলা হচ্ছে কমপক্ষে ১০০ ট্রাক বালি। এ অবৈধ বালি উত্তোলনের কারণে চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের উচিতারবিল ফইত্যাঘোনা এলাকায় ছড়াখালের দুই পাড় ভেঙে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পড়েছে ও দিনের পর দিন ধ্বংস করা হচ্ছে ফসলি জমি। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক এমইউপি ও বর্তমান ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহামুদুল করিম, তার ভাই রুহুল আমিন, ওমর ফারুক ও মোঃ রবিউল নামের একাধিক বালুখেকোদের নেতৃত্বে বিরামহীন এ ধ্বংসযজ্ঞ চলেছে। সমূহ স্থানে একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করা হলেও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিন-রাত বালি উত্তোলন করে যাচ্ছে এসব চিহ্নিত বালুখেকোরা। এদিকে, বালি উত্তোলনের বিষয়টি চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাহাত-উজ-জামানের নজরে আনলে তিনি বলেন, এবিষয়ে আরো কয়েকজন আমাকে অবগত করেছে। বালু উত্তোলনের স্থানগুলোতে গত কয়েকদিন আগেও অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। যদি তারা পূণরায় বালি উত্তোলন করে থাকে সরেজমিন গিয়ে দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান। অন্যদিকে, স্থানীয়রা অভিযোগের সুরে বলেন, প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রতিদিন ফাঁসিয়াখালী ছড়াখাল ও ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে শতশত ট্রাক বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ ছড়াখালের পাড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চলে আসলেও প্রতিকারে এগিয়ে আসছে না কেউই। বালি উত্তোলনের কারণে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি। ভারী ট্রাক চলাচলের কারণে অনেকটা বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে গ্রামীণ সড়কসমূহ। বালি উত্তোলনের উন্মুক্তের সুযোগ নিয়ে উন্মত্ততায় মেঠে ওঠেছে বালি খেকোরা। সংঘবদ্ধ বালি খেকোরা প্রতিদিন প্রায় ১০০ ট্রাক বালি বিক্রি করছে। এ বালি চকরিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চল ছাড়াও যাচ্ছে আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা ও শহরে। এবিষয়ে বালুখেকো সিন্ডিকেটের প্রধান, সাবেক এমইউপি ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহামুদুল করিমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, জমি উচু হওয়ায় চাষাবাদ করতে না পারায় তার খতিয়ানকৃত জমি থেকে বালি উত্তোলন করে বিক্রি করতেছে। আর ছড়াখালের পাড় ভাঙার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফসলি জমি থেকে বালি উত্তোলন করতে পানির প্রয়োজন হওয়ায় পাড় কাটা হয়েছে। তবে, বালি উত্তোলন শেষে তা ভরাট করে দেওয়া হবে বলে জানান। এদিকে, এ অবৈধ বালি উত্তোলনের বিষয়ে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন হেলালীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাবেক এমইউপি ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহামুদুল করিমের নেতৃত্বে এসব বালি উত্তোলন চলছে। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ানের নেতৃত্বে সম্প্রতি সমূহস্পটে অভিযান করা হয়েছিলো। অভিযানের পরও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ফের বালি উত্তোলন করছে এসব বালিখেকোরা। এমনকি, চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনায় বেশ কয়েকবার আমি নিজেও বালি উত্তোলন বন্ধে অভিযান করি। কিন্তু, বালি উত্তোলনকৃত জায়গাগুলো বনবিভাগের হওয়া স্বত্ত্বেও বনবিভাগ রয়েছে নীরব দর্শকের ভূমিকায়। তাদের একাধিকবার অবগত করলেও তারা এ অবৈধ বালি উত্তোলন বন্ধে নেয়নি কোন পদক্ষেপ। ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন হেলালী কর্তৃক বনবিভাগের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের রিংভং বনবিট কর্মকর্তা কামরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি চেয়ারম্যানের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বালি উত্তোলনের ব্যাপারে মাহামুদুল করিমকে আমাদের দপ্তরে ডাকা হয়েছিলো। এসময় মাহামুদুল করিম কর্তৃক বালি উত্তোলনের জায়গাগুলো তার খতিয়ানকৃত জায়গা দাবী করে। পরে খতিয়ানসহ আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হলে তিনি একটি খতিয়ান নিয়ে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন। কিন্তু, তিনি যে খতিয়ান নিয়ে এসেছিলেন তা আধৌ কতটুকু সঠিক তা আমাদের জানা নেই। পরিমাপ করা হলেই তখন বুঝা যাবে আসলে মাহামুদুল করিম কোন জায়গায় বা কাদের জায়গা থেকে বালি উত্তোলন করছে। এসময় প্রতিবেদককে তিনি আরো বলেন, মাহামুদুল করিমের সাথে ফোনে কথা না বলে সরাসরি দেখা করার জন্য। অপরদিকে এ অবৈধ বালি উত্তোলনের বিষয়ে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বনবিভাগ ও চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে সরেজমিন গিয়ে অবৈধ বালি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।