একটি পা ছোট অন্যটি বড়। হাত ছাড়া স্বাভাবিকভাবে চলাফেরাও করতে পারেন না। দরিদ্র পরিবারে বাবা বেকার। মা অন্যের বাসাবাড়িতে কাজ করে কষ্ট করে সংসার চালান। এভাবেই খুব কষ্ট করে সাভারে বেড়ে ওঠেন সোনিয়া আক্তার।তবে এসব প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি তাকে। পরিবারের উৎসাহে পড়াশোনা শুরু করেন। এবার পা দিয়ে লিখে সাভার কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে কৃতকার্য হয়েছেন সোনিয়া।বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ফলাফল অনুযায়ী সাভার কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৪.৩৩ পেয়ে পাস করেন সোনিয়া আক্তার।এর আগে ২০২০ সালে সাভারের অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৩.২৮ পেয়ে এসএসসি পাস করেন সোনিয়া।সোনিয়ার বাবা শাহাদাত হোসেন বলেন, আমার মেয়ের অবস্থা দেখে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। কিন্তু তার অদম্য চেষ্টায় হাত ছাড়াই যে সফলতা ছুঁতে পারছে, এতে আমার আর কষ্ট নেই। এখন সোনিয়া আমার গর্বের। আমরা যদি সামর্থ্যবান হতাম তাহলে কৃত্রিম হাত-পা লাগিয়ে মেয়েটার কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করার চেষ্টা করতাম।সোনিয়ার মা আকলিমা আক্তার বলেন, আমি সোনিয়ার লেখাপড়া, খাওয়া-দাওয়াসহ সব কিছুতেই সাপোর্ট দিয়েছি যাতে সে হাতের অভাব অনুভব করতে না পারে। কিন্তু মাঝেমাঝে বলত, মা আমার হাত দুটি যদি থাকত তোমাকে জড়িয়ে ধরতে পারতাম। এমন কথা শুনেই চোখে পানি এসে যায়। কিন্তু সোনিয়াকে বুঝতে দেই না।সোনিয়া বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই অনেক কিছু পা দিয়ে করার চেষ্টা করেছি। পড়াশোনা শুরু করলে পা দিয়ে লেখার চেষ্টা করে সফল হয়েছি। তবে চলাফেরা করতে আমার অনেক কষ্ট হয়। হাত না থাকলে চলাফেরা করা অনেক কষ্টদায়ক। আজ যখন পা দিয়ে লিখে রেজাল্ট পেয়েছি তখনই সব কষ্ট ভুলে গেছি। তবে হাতের অভাব তো পূরণ হয় না। যদি কৃত্রিম হাতও আমার যুক্ত থাকত তাহলে চলাফেরা করতে সুবিধা হত। অন্তত যারা আমার জন্য এত কষ্ট করেছেন, আমার মা-বাবাকে তো জড়িয়ে ধরতে পারতাম।সাভার কলেজের অধ্যক্ষ মো. ইমরুল হাসান বলেন, আমাদের সোনিয়া জিপিএ-৪.৩৩ পেয়েছে। এটা আমাদের কাছে বিশেষ কিছু। সোনিয়ার দুটি হাত নেই, এছাড়া তার একটি পা বড় অন্যটি ছোট। এভাবেই কষ্ট করে সে কৃতকার্য হয়েছে।