জেলা প্রশাসন, বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি, পর্যটন পুলিশসহ এ ধরনের আরও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের সক্রিয় উপস্থিতি দেখা গেলেও আজও শৃঙ্খলা ফেরেনি কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে।ভিক্ষুক, হকার, ছবি তোলার আবদার নিয়ে ভ্রাম্যমাণ ফটোগ্রাফারসহ নানান জনের নানান রকম শব্দের উৎপাতে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় পর্যটকদের।বছরজুড়েই নেতিবাচক আলোচনায় শিরোনাম হতে থাকে এই কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। এমন অবস্থা চলতে থাকলে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের গৌরব বহনকারী এ পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সচেতনমহল। তারা বলছেন, পর্যটন শিল্প রক্ষার পাশাপাশি পর্যটকদের কক্সবাজারমুখী করতে এসব নানা অনিয়ম রোধে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি জরুরি। অন্যথায় একটা সময় কক্সবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে পর্যটকরা।জানা গেছে- সৈকতে ভিক্ষুক, গরুর অবাধ বিচরণ, হিজড়া, বডি ম্যাসেজ, চিপস, পানি, সিগারেট ও ঝালমুড়িওয়ালাদের উৎপাত দীর্ঘদিনের। অভিযোগ রয়েছে, এসব ভ্রাম্যমাণ হকারের কাছ থেকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করে একটি গ্রুপ। কেউ টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে শারীরিকভাবে নাজেহাল এবং এলাকাছাড়া করা হয়। অভিযোগ আছে- ভোরের আলো না ফুটতেই দালাল-ফড়িয়াদের উপদ্রবের। এর উপর পর্যটন এলাকায় চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা তো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরও আছে সৈকতে ফটোগ্রাফার ও বিচবাইক ব্যবসায়ীদের গলাকাটা বাণিজ্যের যন্ত্রণা। ফলে নানাবিধ তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে পর্যটন এলাকা ত্যাগ করেন বেশিরভাগ পর্যটক।সম্প্রতি মা’কে নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে এসে সাকলায়েন রাসেল নামের এক ডাক্তার তার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের আইডি থেকে পোস্ট করে জানান, প্রতি মিনিটে একজন কলা, চানাচুর, চা-কফি বিক্রেতাদের উৎপাত। প্রতি মিনিটে একজন ভিক্ষুকের আবদার। একটু পরপর ছবি তোলেন, বাইকে ওঠেন, ঘোড়ায় ওঠেন এমন শব্দ। আছে, ক্ষুদে থেরাপিস্টের (হাত পা মাথা ম্যাসেজ করে দেয়) স্পর্শ। এয়ারপোর্টে ফেরার সময় অটোওয়ালা অনেকটা ঠেক দিয়েই ৮০ টাকার ভাড়া সর্বোচ্চ ২০০ টাকা নেওয়ার কথা লিখেছেন তিনি।তিনি বলেন, ‘এয়ারপোর্টের এন্ট্রির স্ক্যানিং মেশিনে অফিসারদের সেই সুন্দর ব্যবহার। সালাম দিয়ে বললেন, ‘স্যার যত্ন করে ব্যাগ পার করেছি’, কিছু খুশি করেন, না শোনার ভান করে বোর্ডিং পাশ নিতে গেলাম। ফাইনাল ডিপারচারের স্ক্যানিং মেশিনের সামনে গেলাম, কর্তব্যরত অফিসার আগেই স্নিগ্ধ হাসি দিয়ে বললেন, আপনার সব লোকদের সুন্দরমত পার করেছি। বুঝলাম, আবারও সালাম দিয়ে বকশিস চাইবে। কারণ এখানে পার করার কিছুই নাই। চেকিং শেষ হওয়া মাত্রই সালাম ও খুশি করার আবেদন। হোটেল ভাড়া, রিকশাভাড়া, খাবারের যেমন খুশি তেমন মূল্যের কথা নাইবা বললাম।ডাক্তার সাকলায়েন রাসেল বলেন, ‘সারাবিশ্বে ট্যুরিস্টদের প্রতি স্থানীয়দের আচরণ হয় একরকম যাতে বারবার আসে, অন্যদের আসতে অনুপ্রাণিত করে। আর আমাদের দেশে ট্যুরিস্টদের প্রতি তাদের আচরণ- পাইছি আপনাকে জীবনে আর নাও আসতে পারেন, তাই ডলা যা দেওয়ার এখনই দেই!’ পরিবেশ ট্যুরিস্টবান্ধব না করে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত বলে গলা ফাটালে কোন লাভ হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।জামালপুর থেকে আসা কাউসার দম্পতি বলেন, ‘গরু দেখলে নারী ও বাচ্চারা এমনিতে ভয় পায়। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে অনেক পুরুষও। কিন্তু সৈকতে বেড়াতে এসে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া খুবই বিড়ম্বনার।’ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ট্যুরিস্ট পুলিশের কাজ হচ্ছে পর্যটকদের নিরাপত্তা দেয়া। তারপরও হকার, ভিক্ষুকের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ভবিষ্যতে পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারে সেজন্য দ্রুত পদক্ষপে নেওয়া হচ্ছে।’পর্যটন সেলের দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবগত হয়ে আমি নিজেই বিচে অভিযানে যাই। আমরা একদিক দিয়ে গেলে তারা অন্যদিক দিয়ে পালিয়ে যায়। ইতোমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানো হয়েছে এবং পর্যটকরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে ও নিরাপদে ঘুরতে পারেন, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’