খাগড়াছড়ির রামগড়ের অত্যন্ত দুর্গম পাহাড়ি গ্রাম তৈচাকমাপাড়া। উঁচু টিলার চূড়ায় বাঁশ-ছনের তৈরি জরাজীর্ণ ছোট একটি মাচাংঘরে অতিকষ্টে বসবাস করেন ষাটোর্ধ বৃদ্ধ কমসিং ত্রিপুরা ও তার সহধর্মিণী দিশিরাম ত্রিপুরা। সরকারি খাস টিলাভূমিটিতেই জুমচাষ করে কোন রকমে দু’জনের জীবন চলে। ৮০’র দশকে পাহাড়ের অস্থির পরিস্থিতিতে সপরিবারে দেশান্তরি হয়ে ভারতের ত্রিপুরায় আশ্রয় নিয়ে ছিলেন। ৯০’র দশকে পুনরায় মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন।দেশে ফেরার পর তৈচাকমাপাড়ার নির্জন গহীন বনজঙ্গল ঘেরা সরকারি খাসটিলায় বনের বাঁশ-ছন দিয়ে মাচাংঘর বানিয়ে মাথাগোঁজার ঠাঁই করে নেন স্বামী-স্ত্রী। এখন আগের মত বনে বাঁশ-ছন পাওয়া যায় না, তাই তাদের জরাজীর্ণ মাচাংঘরটি মেরামত করাও সম্ভব হচ্ছে না। এ কনকনে শীতে নিরুপায় হয়ে ভাঙ্গা-চুড়া ঘরটিতেই থাকতে হচ্ছে তাদের।কিন্তু আগামী বর্ষায় এ ঘরে থাকার আর কোন উপায় নেই, তাই দুশ্চিন্তায় দিন কাটছিল তাদের। এ অবস্থায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ও ভূমির মালিকানার সুবিধাভোগী হতে উপজেলা প্রশাসনের তালিকাভুক্ত হন ক্ষুুদ্র নৃ গোষ্ঠীর এ অসহায় পরিবারটি। উঁচু টিলার চূড়ায় জরাজীর্ণ মাচাংঘরের পাশেই নির্মাণ হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সেমিপাকা ঘর। গহীন জঙ্গলের মঝে ভাঙ্গাচুড়া ছোট একটি মাচাংঘরে কখনও অভুক্ত, কখনও অর্ধভুক্ত দিনাতিপাত করা অতিদরিদ্র ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর এ পরিবার স্বপ্নেও কল্পনা করেনি এমন একটি নিজের ঘর হবে। এখন তারা বুকভরা আনন্দ নিয়ে প্রতীক্ষায় প্রহর গুণছেন স্বপ্নের এ গৃহে উঠার।কমসিং ত্রিপুরার মত রামগড়ের ১৩৩টি ভূমিহীন, গৃহহীন, স্থায়ী ঠিকানাবিহীন অতিদ্ররিদ্র পাহাড়ি-বাঙালি পরিবারের অসহায় মানুষগুলো প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৪০০ বর্গফুট আয়তনের দুই কক্ষ বিশিষ্ট লাল রঙয়ের ঢেউটিনের ছাল আর হলদে রঙয়ের দেয়ালের দৃষ্টিনন্দন একটি সেমিপাকা ঘর পাবেন, ভূমির রেকর্ডিয় মালিক হবেন এমন কথা স্বপ্নেও ভাবেননি।রামগড় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. নজরুল ইসলাম জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় চতুর্থ পর্যায়ে রামগড়ে এবার মোট ১৩৩টি পরিবার ঘর ও জমি পাবেন। এরমধ্যে রামগড় ইউনিয়নে ৩৭টি, পাতাছড়ায় ৭৩ ও রামগড় পৌরসভায় ২৩টি পরিবার রয়েছে। ১৩৩টি ঘরের নির্মাণকাজ প্রায় শেষের পথে। তিনি বলেন, এরআগে ১ম, ২য় ও ৩য় পর্যায়ে ৩৪৩টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবার ঘর পেয়ে বসবাস করছেন।রামগড় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দীন আরাফাত বলেন, ‘সরেজমিনে যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত গৃহ ও ভূমিহীন পরিবার শনাক্ত করে তাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ও জমি দেওয়া হচ্ছে। উপযুক্ততার ভিত্তিতে এখানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালি সকলেই সমানভাবে এ সুবিধা পাচ্ছেন। গৃহ নির্মাণে সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করা হচ্ছে।’রামগড় উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কারবারি বলেন, ‘গৃহ ও ভূমিহীন অসহায় পরিবারদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহের এ প্রকল্পের মুজিববর্ষের উপহারের ঘর ও জমি পাহাড়ের অসহায় গৃহহীন মানুষের করুণ জীবনযাপন পাল্টে দিচ্ছে।