সাদাস্রাব বা লিকুরিয়া প্রায় প্রতিটি মেয়ে/ মহিলাদের হয়। মাসিকের শুরু থেকে মেনপজ পর্যন্ত হরমোনের প্রভাবে এই সাদাস্রাব হয়ে থাকে।অনেকেই সাদাস্রাব নিয়ে খুবই চিন্তিত থাকেন। অনেক নারীর ধারণা সাদা স্রাবের ফলে শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়, এবং স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে।না এটা একটা শরীর বৃত্তীয় স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটা শরীরের রাসায়নিক সমতা বজায় রাখতে এবং যোনির কোষগুলোকে সচল রাখে। একই সাথে এটা যোনিপথকে পিচ্ছিল রাখে ভেজা রাখে এবং যোনিপথকে জীবাণমুক্ত রাখে। সেজন্য বলছি সাদা স্রাব হচ্ছে দেখলেই ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।অনেক রোগীই আমাদেরকে প্রশ্ন করেন যে -ম্যাম আমার মেয়ের মাত্র ১৩ বছর বয়স, ওর কেন এত সাদাস্রাব হচ্ছে ??ওর কোমরে ব্যথা হয় এবং ও দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে।এর উত্তরে আমি প্রথমেই বলব আমাদের জানতে হবে সাদা স্রাবের কারণ কি? সাধারণত দুটি কারণে সাদাস্রাব হয়ে থাকেঃ
১. স্বাভাবিক স্রাব যেটা আমি বলেছি হরমোনের কারণে হয়
২, আস্বাভাবিক স্রাব যেটা বিভিন্ন রকমের ইনফেকশনের জন্য হয়।
স্বাভাবিক স্রাব কেন হয় এই ব্যাপারে আমাদের একটু ধারণা থাকা দরকার।
মেয়েদের মাসিক শুরু হওয়ার পর থেকে মেনুপজের আগ পর্যন্ত শরীরে হরমোন বিশেষ করে ইস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবে এই সাদা স্রাব হয়ে থাকে, এটা আমি আগেই উল্লেখ করেছি। এটা একেবারে ই স্বাভাবিক একটা উপসর্গ।এই স্রাব সাধারণত পানির মত অথবা সাদা পাতলা দুধের মত হতে পারে কিন্তু এর সাথে অন্য কোন ধরনের অসুবিধা থাকে না।আমাদের ধারণা থাকতে হবে যে কোন কোন সময়ে এই স্বাভাবিক স্রাব বেশি হতে পারে
১. ঋতু চক্রের মাঝামাঝি সময়ে অথবা মাসিক শুরুর আগে হয়তো পরিমান টা একটু বাড়তে পারে।
২. গর্ভাবস্থায়
৩, যৌন মিলনের সময়
৪. যৌন উত্তেজনার সময়
৫. অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করলে
এই স্রাব একটা শরীর বৃত্তীয় স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটা যোনিপথের রাসায়নিক সমতা রক্ষা করে এবং যোনিপথকে জীবানুমুক্ত রাখে।আমি একটা সহজ কথা আপনাদেরকে বলি ।আমাদের মুখের মধ্যে সব সময় থুথু আসে। চিন্তা করে দেখেছেন কখনো কেন থুতু আসছে?? কারণটা হলো আমাদের মুখের মধ্যে অনেক গ্রন্থি আছে যেখান থেকে এই রস বার হয় এবং এই থুতু যদি না থাকতো তাহলে আমাদের খাদ্যদ্রব্য আমরা গিলতে পারতাম না, চিবুতে পারতাম না । এছাড়াও কথা বলতে পারতাম না ।ঠিক সেরকম জরায়ুর মুখে এবং যোনিপথে অসংখ্য গ্রন্থি থাকে এই গ্রন্থি নিঃসৃত রসকে আমরা সাদাস্রাব রূপে দেখতে পাই। এজন্য ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই ।এটা আপনার শরীরকে দুর্বল করে না, এটার সাথে কোন কোমর ব্যথার সম্পর্ক নাই। আপনি যদি এই ব্যাখা গুলি যেগুলি আমি দিলাম সেটা বিশ্বাস করতে পারেন তাহলে একটা সুস্থ জীবন যাপন করা আপনার পক্ষে সম্ভব।ভয় কে জয় করুন। সুস্থ, স্বাভাবিক, সুন্দর, দুশ্চিন্তাহীন জীবন যাপন করুন। কিশোরী মেয়েরা এটা নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্হ হয়ে পড়ে।এটা একটা অতি প্রয়োজনীয় স্বাভাবিক শারিরিক প্রক্রিয়া, কোন অসুখ নয়।
এবার আসি অস্বাভাবিক যোনিস্রাব বা কখন আমরা স্রাবের জন্য ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবো? যদি স্রাবের সাথে চুলকানি থাকে ,অথবা দুর্গন্ধ থাকে, অথবা যৌন মিলনের সময় ব্যথা থাকে, স্রাবের রং যদি পরিবর্তন হয় ,দেখতে পনিরের মত হয়,ফেনা যুক্ত হয়, এবং একই সাথে যদি তলপেটেও ব্যাথা থাকে মনে করতে হবে যে এটা স্বাভাবিক স্রাব নয় ,এটা কোন ইনফেকশনের কারণে হচ্ছে।যখনই স্রাবের সাথে এসব উপসর্গ থাকবে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া খুবই দরকার।
কারণ এগুলো সাধারণত ফাংগাল ইনফেকশন ,অথবা অন্য জীবানুর ইনফেকশনের জন্য হয়ে থাকে এবং এটা চিকিৎসা ছাড়া ঠিক হবে না।অনেক ক্ষেত্রে স্বামীরও একই সাথে ট্রিটমেন্ট লাগে ।তাহলে প্রিয় পাঠক একটা কথা বলতে চাই যে স্বাভাবিক স্রাব নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে বরং যখন স্রাবের যে পরিবর্তনগুলো বলেছি এই উপসর্গ ওরগুলি থাকে অবশ্যই একজন গাইনোকলজিস্টের পরামর্শ নিন।
লেখক-ডাক্তার রৌশান মোর্শেদ
সাবেক অধ্যাপক, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগ,
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।