দামতুয়া ঝরনা বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলায় অবস্থিত। প্রকৃতির অপরূপ নানা আয়োজনের দেখা মিলবে আলীকদম উপজেলার পাহাড়ি ঝরনা ও জলপ্রপাতে। পাহাড়ের গায়ে আঁকিবুঁকি কেটে আছে সবুজের সমারোহ। সেই সবুজের বুক চিরে নেমে এসেছে অবিরাম জলধারা। এর মধ্যে নজরে পড়বে ওয়াংপা, দামতুয়া, তামাংঝিড়ি ও রুপমুহুরী ঝরনা। ভরাবর্ষায় উত্তাল কলতানে মুখর এসব ঝরনা ও জলপ্রপাত সবুজ পাহাড়ের নিস্তব্ধতায় আঁচল বিছিয়ে পর্যটকদের অভ্যর্থনা জানায়। তাই সবুজের টানে প্রাণের উচ্ছ্বাসে হিমশীতল জলে সিক্ত হতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন তারা।এখানকার সবুজ পাহাড়ে লুকিয়ে আছে অসংখ্য জলধারা। আষাঢ় চলে গেলেও এখনো উপচেপড়া ভরাযৌবনের স্রোত দেখা যায় এসব ঝরনা ও জলপ্রপাতে। তাই তো পর্যটকদের পদচারণে মুখর আলীকদম-থানচি সড়ক। চট্টগ্রাম কিংবা কক্সবাজার থেকে যেতে হবে চকরিয়া বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে বাসে করে আলীকদম বাসস্ট্যান্ডে। আলীকদম-থানচি সড়কের ১৭ কিলোমিটার পয়েন্টের আদু মুরং পাড়া থেকে ছয়-সাত কিলোমিটার দূরে দামতুয়া ঝরনার অবস্থান। ১৭ কিলোমিটার পথ জিপ অথবা মোটরসাইকেলে যাওয়ার পর বাকি পথ যেতে হয় হেঁটেই। দূর থেকেই দেখা মিলবে পানির কয়েকশ গজ ওপরে জলপ্রপাত। এর পাথুরে মাটির ধাপগুলো আরো বিস্ময়কর। যেন রাজমিস্ত্রির নিপুণ হাতে সৃষ্ট কোনো আলপনা।ঝরনায় দুই দিকের খাড়া পাহাড়ি দেওয়াল বেয়ে কলকল, ঝমঝম রবে সুরের অনুরণন তুলে উত্তাল স্রোত গড়িয়ে পড়ছে নিচের গভীর জলাশয়ে। পাহাড়ের নিস্তব্ধতা সেখানে ম্লান। উঁচু থেকে পড়া পানির কিছু অংশ আবার জলীয় বাষ্প হয়ে বাতাসে মিশে এক ধোঁয়াশাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এ যেন পাহাড়ের গভীরে মেঘমালা! ঝরনায় নামতে হলে খাড়া পাহাড়ের কিছুটা পথ ডিঙিয়ে নিচে নামতে হয়। তবে দামতুয়া জলপ্রপাতে নামার পথ পাথুরে মাটি। সেখানে নামতে তেমন সমস্যা হয় না। ঝরনা ও জলপ্রপাতের নিচে মাঝারি ধরনের জলাশয় রয়েছে। এখানে সাঁতার কাটলে ও গোসল করলে প্রশান্তি মিলবে। দামতুয়া পৌঁছার অন্তত এক ঘণ্টা আগে দেখা মিলবে ওয়াংপা ঝরনার। মূল ঝরনা দেখতে হলে খাড়া পাহাড় বেয়ে নিচে নামতে হবে। চলাচলের পথে অসংখ্যা ছোট-বড় পাথরের ভাঁজে শীতল জল যেন জানান দেয় এর উপস্থিতি। ওপর থেকে পানি গড়িয়ে পড়ার দৃশ্য আরো মনোহর। ধারণা করা হয়, শত শত বছর আগে থেকেই প্রবাহিত এসব ঝরনা। এত দিন সড়ক যোগাযোগ না থাকায়, বিচ্ছিন্ন পাহাড়ি জনপদ হওয়ায় তা ছিল লোক-লোকচক্ষুর অন্তরালে। উদ্যমী তরুণ ও যুবকেরা পাহাড়ের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এসব ঝরনা ও জলপ্রপাতকে খুঁজে বের করে আনছেন। পালটে যাচ্ছে আলীকদম উপজেলার পর্যটন পরিবেশ। সরকারি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হলে এসব স্পট হয়ে উঠবে পর্যটকবান্ধব।আলীকদমের এসব ঝরনার প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরা। এখানে প্রকৃতি খেলা করে আপন মনে। ঝরনা ধারায় গা ভিজিয়ে যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ থেকে ক্ষণিকের জন্য হলেও মুক্তি মিলে। রাতে যদিও সেখানে অবস্থান করা নিরাপদ নয়। তবে তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান করলে বোঝা যাবে চাঁদের আলোয় ঝরনার অপরূপ সৌন্দর্য ও কলতান। পার্বত্য জেলা পরিষদ নিয়ন্ত্রিত রেস্ট হাউসে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। আলীকদমের উজেলার চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, দামতুয়া ঝরনার যাওয়ার পথ পরিষদের তরফ থেকে পরিস্কার করা হয়েছে। সামনে পর্যটকদের সুবিধার্থে আরো পদক্ষেপ নেওয়া হবে।