রিকশা চুরি হওয়ার পর ঠাকুরগাঁওয়ে ৩৯ জন ব্যক্তি রিকশা কিনে দিতে চেয়েছেন তফিজুলকে। এ ঘটনায় ‘কোনটা রেখে কোনটা নেবো’ রকমের মধুর সংকটে পড়তে হয় এই রিকশাচালককে।শুক্রবার (৩১ মার্চ) বিকেলে শহরের হাজীপাড়া ফেয়ার পথে হাসপাতালের সামনে অটোরিকশা রেখে আসরের নামাজ পড়তে যান তফিজুল। এরপর রিকশাটি চুরি হয়। একমাত্র জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন হারিয়ে দিশেহারা হয়ে কান্নাকাটি শুরু করেন তিনি। ঘটনাটি ফেসবুকে প্রচারের আধাঘণ্টার মধ্যেই ৩৯ জন ব্যক্তি তফিজুলকে রিকশা কিনে দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে যোগাযোগ করেছেন।জানা গেছে, তফিজুলের রিকশা হারানোর পরে কান্নাকাটি করার বিষয়টি ভিডিও করে ফেসবুকে পোস্ট করেন স্থানীয় সাংবাদিক তানভীর হাসান তানু। এর পর থেকেই সেই সাংবাদিক ও রিকশাচালকের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন অনেকেই। আধঘণ্টায় ৩৯ জন সেচ্ছাসেবক তাকে কিনে দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এতে উপস্থিত অনেকেই বিস্মিত হয়ে যায়।রিকশাচালক তফিসুল ইসলামের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ দিঘিয়া পারকুন্ডা গ্রামে। তিনি বলেন, আমি দিনমজুর রিকশাচালক। আমার চারটি মেয়ে রয়েছে। দুই মেয়ের বিয়ে দিলেও আরও দুই মেয়ে ও স্ত্রীসহ চার সদস্যের সংসার। এই সংসারে আমি একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি। লোনের উপরে নেওয়া চুরি যাওয়া রিকশাটি ছিলো আমার একমাত্র অবলম্বন। আজ আসরের নামাজ পড়তে রিকশা রেখে একটি হাসপাতালের নিচতলার জামাতে শরিক হই। বের হয়ে দেখি রিকশাটি আর নেই।রিকশা কিনে দিতে চেয়েও সুযোগ না পাওয়া সমাজসেবক সামসুজ্জোহা জানান, সমাজে ভালো মানুষ আর নেই- এ যেনো আমাদের নিত্য প্রবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এখনও সমাজের একটি বড় অংশই যে মানবিক, তার প্রামণ পাওয়া গেলো রিকশা চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে।ঘটনাটি ফেসবুকে শেয়ার করা সাংবাদিক তানু বলেন, ঘটনাটি ঠিক আমার বাসার সামনেই ঘটেছে। আমি বাসা থেকে বের হলে তফিজুলকে কান্না করতে দেখি। বিষয়টি দেখে আমার খুবই খারাপ লাগে। চার কন্যার জনক একজন রিকশাচালকের পরিস্থিতি খুবই দুঃখজনক ছিলো। ভেবেছিলাম ফেসবুকে প্রচার করে কিছু কিছু টাকা সংগ্রহ করে তফিসুলকে একটি রিকশা কিনে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো। তবে পোস্ট করার আধঘণ্টায় আমাদের সাথে ৩৯ জন যোগাযোগ করে রিকশা কিনে দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে। বিষয়টি আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। তবে সবার আগে যোগাযোগ করার সুবাদে স্থানীয় ব্যবসায়ী সৌরভের মাধ্যমে সাহায্যের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক সৌরভ বলেন, ইফতার করার মুহূর্তে আমি সাংবাদিক তানভীরের ফেসবুকে একটি পোস্ট দেখতে পাই। সেখানে দেখি এক রিকশাচালক রিকশা হারিয়ে কান্নাকাটি করছেন। বিষয়টি আমাকে বেশ নাড়া দেয়। তাই তৎক্ষণাৎ আমি সাংবাদিকের সাথে যোগাযোগ করে রিকশার ব্যবস্থা করে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করি। শুনেছি অনেকেই সাহায্যে এগিয়ে আসতে চেয়েছেন। এমন বিষয় আমাদের সমাজে মানবিকতার উদাহরণ। এই মহৎ কাজে নিজেকে রাখতে পেরে ভালো লাগছে।