রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) নেতা মোহাম্মদ আসাদুল্লাহর বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাওয়ার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে সৌদি আরবের জেদ্দায় পালিয়ে যাওয়ার সময় তিনি ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। বর্তমানে তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ।জিজ্ঞাসাবাদে মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ পুলিশকে বলেছেন, দালালদের ২ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে তিনি বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট তৈরি করেছেন। পরবর্তী সময়ে একই চক্রটির সহায়তায় ওমরা ভিসা করে সৌদি আরব যাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য কখনো থানা বা পাসপোর্ট অফিসে যেতে হয়নি বলে পুলিশকে জানিয়েছেন মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ।জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) গোয়েন্দা শাখার উপ-কমিশনার (ডিবি-উত্তর) নিহাদ আদনান তাইয়ান ইত্তেফাককে বলেন, বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশ যাওয়ার সময় মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তিকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি মূলত মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া একজন রোহিঙ্গা। তিনি কক্সবাজারের উখিয়ার ১২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকতেন। গত ৯ জানুয়ারি উখিয়া থানায় দায়ের করা একটি হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামি তিনি। ঐ মামলা থেকে বাঁচতে তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এজন্য তিনি দালালদের সহায়তায় বাংলাদেশি পাসপোর্ট বানিয়ে ওমরা ভিসায় সৌদি আরবের জেদ্দায় চলে যাচ্ছিলেন। জেদ্দায় তার বড় ভাই থাকেন বলে জানিয়েছেন। আসাদুল্লাহর পাসপোর্টটি আমরা জব্দ করেছি।কীভাবে বাংলাদেশের পাসপোর্ট তার হাতে এসেছে জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা নিহাদ আদনান তাইয়ান বলেন, আসাদুল্লাহর পাসপোর্টে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। গত বছরের ২৭ নভেম্বর এ পাসপোর্ট তার নামে ইস্যু করা হয়। ১০ বছর মেয়াদি এ পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হবে ২০৩২ সালের ২৬ নভেম্বর। এর আগে ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর তার নামে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ইস্যু করা হয় চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং থানার ঠিকানা ব্যবহার করে। জিজ্ঞাসাবাদে আসাদুল্লাহ আরো জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কিছু দালাল রয়েছে যারা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট তৈরি করে দেয়। এই চক্রের হাতে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে তিনি বাংলাদেশি এনআইডি ও পাসপোর্ট পেয়েছেন। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এজন্য নাকি তাকে (আসাদুল্লাহ) কখনো থানা বা পাসপোর্ট অফিসে যেতে হয়নি। পাসপোর্ট অফিসে না গিয়ে তিনি কীভাবে এবং কার সহযোগিতায় পাসপোর্ট পেয়েছেন সেটা তদন্ত করা হচ্ছে। আসাদুল্লাহ কয়েকজন দালালের নাম বলেছে।আশা করছি দুয়েক দিনের মধ্যেই আমরা তাদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো।জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক আবু সাইদ ইত্তেফাককে বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ আনুষঙ্গিক কাগজপত্র থাকলে বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিক পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারেন। এসব কাগজপত্র দাখিল করেই মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ পাসপোর্টের আবেদন করেছেন বলে জানতে পেরেছি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে একজন রোহিঙ্গা কীভাবে এসব কাগজপত্র পায়। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। তার বাংলাদেশি এনআইডি পাওয়ার কথা নয়। আসাদুল্লাহ অফিসে না এসে পাসপোর্ট পাওয়ার দাবিও সত্য নয়। অফিসে না এলে তিনি ছবি তুললেন কীভাবে। চোখের ছবি, আঙুলের ছাপ দিলেন কীভাবে। পাসপোর্টের ছবিটি তার নাকি অন্য কারো সেটা ভালোভাবে তদন্ত করে দেখা উচিত।