নতুন বই নিয়ে বাড়ি ফেরা হলো না সপ্তম শ্রেণির ছাত্র নিরব মণ্ডলের (১৩)। অপহরণের পর তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে তারই বিদ্যালয়ের পাঁচজন ছাত্র।বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাতে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া এসিজিবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত একটি কক্ষ থেকে নিরবের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিরব গুটুদিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী শেখর মণ্ডলের ছেলে। সে গুটুদিয়া এসিজিবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল।এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একই স্কুলের ৫ ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই পাঁচজনই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। পুলিশ বলছে, ভারতের টিভি সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রোল দেখে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে নিরবকে অপহরণের পরিকল্পনা করে তারা।নিহতের পারিবারিক সূত্র ও এলাকাবাসী জানায়, নিরব প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে গুটুদিয়া এসিজিবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যায়। দুপুর ২টার পর ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তা থেকে একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক ছাত্র তাকে ডেকে পুনরায় স্কুলের একটি পরিত্যক্ত কক্ষে নিয়ে যায়। এরপর সে এবং তার সহযোগীরা নিরবকে মারপিট করে। পরে তাদের কাছে থাকা দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস তৈরি করে ওই কক্ষের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে দেয়। এতে নিরব শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়।এ ঘটনার পর অভিযুক্ত পাঁচ কিশোর সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। কিছু সময় পর ফোন দিয়ে নিরবের বাবা শেখর মণ্ডলের কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে ফোন দেয় তারা। মুক্তিপণ দাবির বিষয়টি তখনই শেখর ডুমুরিয়া থানা পুলিশকে জানানো হয়।পরে পুলিশ তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে বৃহস্পতিবার রাতেই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অভিযুক্ত ওই ৫ জনকে আটক করে। তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে রাত দেড়টার দিকে গুটুদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত একটি কক্ষ থেকে নিরবের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় নিরবের পিঠে বইভর্তি স্কুলব্যাগ এবং পরনে স্কুলের ড্রেস, পায়ে সাদা রঙের জুতা পরা ছিল। গুটুদিয়া এসিজিবি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শংকর মণ্ডল বলেন, গ্রেফতারদের মধ্যে চারজন তার বিদ্যালয়ের ছাত্র। নিরব মণ্ডল ভালো ছেলে ছিল। বৃহস্পতিবারই তাকে নতুন বই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই বই নিয়ে তার বাড়ি যাওয়া হলো না। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সকলের শাস্তি চাই।ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ কনি মিয়া জানান, মুক্তিপণের অভিযোগ পেয়ে ডুমুরিয়া থানা পুলিশ মোবাইল নম্বর ট্রাকিং করে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে খুলনার জিরো পয়েন্ট এলাকা থেকে একজনকে আটক করে। এরপর তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী রাত দেড়টার দিকে গুটুদিয়া স্কুলের পরিত্যক্ত কক্ষ থেকে নিরবের লাশ উদ্ধার করা হয়।তিনি আরও জানান, ভারতের টিভি সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রোল দেখে দ্রুত সময়ের মধ্যে টাকা আয়ের উদ্দেশ্যে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করেছিল ওই পাঁচ স্কুলছাত্র। সে অনুযায়ী নিরবকে আটকে রেখে তার বাবার কাছে মুক্তিপণ দাবি করে বলে তারা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।এদিকে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আজ শুক্রবার নিহত নিরবের মামা বিশ্বজিৎ জোয়ার্দার বাদী হয়ে ডুমুরিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।