একই ছাউনি তলে কত মাখামাখি
একথালে পানাহার এক খাটে থাকি
এতো কাছাকাছি থাকি তবু কতদূর
এ কেমন ছেলে খেলা যায় কেটে সুর।
পউষ কম্বলে খেলে প্রেম প্রেম পাশা
ভোরের সুরুজে দেখি কালিমাখা আশা
ক্ষণে হাসি ক্ষণে কাঁদি ক্ষণে সাদাকালো
ক্ষণে নাচে রঙমাখা পূর্ণমাসী আলো।
ও বুকের খতিয়ান বুঝা বড় দায়
আমি কার কে আমার কাঁদি নিরালায়।
২.
হাত ভরা চুড়ি দাও কান জোড়া দুল
এলোকেশে ফের গুঁজো বেদনার ফুল
এ কূলেতে চুর-চুর ও কূলেতে প্রেম
নির্বোধ আঁখিরা পড়ে ব্যথাতুর ফ্রেম।
সুর দিলে সুখ দিলে, দিলে চোরাকাঁটা
তাল লয় কেটে আজ ভেতরটা ফাঁকা
দিন ভর আলো জ্বেলে রাতে দিলে কালো
বিনাদোষে তারা-চাঁদ গ্রহণে হারালো।
ও বুকের খতিয়ান বুঝা আজ দায়
আমি কার কে আমার কাঁদি নিরালায়
৩.
নোনাজল ক্ষণে পান মিঠা জলে স্নান
ক্ষণে বৈশাখী হাওয়া অনুভূতি ম্লান
আলতা রাঙা দু’পদে দাও মিঠি চুম
ফের কাটো নীল কাঁচে দাও ভেঙে ঘুম।
শ্যাওলা শাড়িতে ঢালো ফাগুনের ধারা
সফেদ কাফনে মোড়া প্রেমোত্তাল পাড়া
এই পাশে এই দূরে এই বাজে বীণা
এই দেখি কাঠফাটা ধুপধাপ সিনা
ও বুকের খতিয়ান বুঝা বড় দায়
আমি কার কে আমার কাঁদি নিরালায়
৪.
বাহু ভাঁজে মেখে ওম ঘুম ঘুম আঁখি
হঠাৎ আৎকে ওঠে ছটফটে পাখি
পাহাড় চূড়ায় কষে গালে মারো চড়
নেশালু দু’ঠোট চুমে লাগে বড় ডর।
কোট খোলো বুট খোলো চেপে ধরো কায়া
মৃত দেহে সুখ খোঁজো প্রেমহীন মায়া
টগবগ উতলে পানি অনুভূতি মরা
লাভ কী ঝাঁকিয়ে বলো মৃত হৃদ কড়া।
ও বুকের খতিয়ান বুঝা বড় দায়
আমি কার কে আমার কাঁদি নিরালায়।
৫.
গ্রীষ্মেরই খরাতাপে ফেটেছে ভূতল
কনকের পায়ে পরে ধ্বনি হীন মল
আম-জাম কাঁঠালের রসে ভরি মুখ
তবু কেন এতো ঝালে ফাটে বোবা বুক!
ঝড়ো বৈশাখী হাওয়া নিলো গৃহ চাল
আকাশের হুংকারে কাঁপে দেহ-ছাল
খাটের তোশক ছিনে— ছিনে হুতাশন
মোম শিখা আশা ছিনে— ছিনেছে বসন।
ও বুকের খতিয়ান বুঝা বড় দায়
আমি কার কে আমার খুঁজি নিরালায়।
৬.
আষাঢ় এলেই আমি ভাবি সারাক্ষণ
ভেজা ভেজা চারপাশ কী করি এখন!
চাল নেই চুলো নেই হুতাশন বিনা
দিবস ক্ষুধায় গেলো যামী তুমি হীনা।
জুয়ার আসরে তুমি মজে আছো সুখে
ক্ষণে ক্ষণে হাততালি মদ তুলে মুখে
পা-রাখার জায়গাটা স্যাঁতস্যাঁতে আজ
ক্ষুধায় রজনী কাটে মুখে চেপে লাজ।
ও বুকের খতিয়ান বুঝা বড় দায়
আমি কার কে আমার কাঁদি নিরালায়।
৭.
শরৎ শিউলি তলে এলে এক রাতে
বকুলের মালা গলে হিমঝুড়ি সাথে
শিপন শাড়িতো দিলে, দিলে নীল টিপ
হঠাৎ চমকে নভঃ কাঁপে মনোঃদ্বীপ ।
তাল ছিলো লয় ছিলো, ছিলো কতো আশা
সময়ের গলে ছিলো কান্নারই ভাষা
ঝিরিঝিরি বরিষণ ধুয়ে নিলো সব
চারদিকে হইহই প্রেম প্রেম রব।
ও বুকের খতিয়ান বুঝা বড় দায়
আমি কার কে আমার ভাবি নিরালায়।
৮.
হেমন্ত অবেলা হাসে আধু কুয়াশায়
পিঠাপুলি উৎসবে বেলা কেটে যায়
নবান্নের জয়গানে মেতে উঠে পাড়া
মনোরম পিঠা রস নেই মনে সাড়া।
কার বুকে মাথা রেখে আধু আধু ঘুমে
ভোরের শিউলি ঝড়ে বেদনার চুমে
এক-দুই-তিন করে যায় কেটে দিন
হতাশার কাঁদে বুক করে সিন সিন।
ও বুকের খতিয়ান বুঝা বড় দায়
আমি কার কে আমার কাঁদি নিরালায়।
৯.
হু-হু কাঁপন জড়ায় বেপরোয়া শীত
ঝরাপাতা বাজিয়েছে নিয়তির গীত
কুয়াশার ধোঁয়া নিয়ে এলে এক ভোরে
হাত ধরে প্রেয়সীর পিছু ফিরে মোড়ে
মিছামিছি বালি খেলা হলো আজ শেষ
ক্লান্ত শরীরও মেলে বিহঙ্গের ক্লেশ
নাম পরিচয় হীনা বকসাদা ঘাটে
আবাদ অশ্রু গড়ে সোনাঝরা মাঠে।
ও বুকের খতিয়ান বোঝা বড় দায়
আমি কার কে আমার কাঁদি নিরালায়।
১০.
খেলেছে বসন্ত রাজ পাল তোলা নায়ে
লাল-নীল-হলদেটে ফুলেদের গায়ে
কোকিলের কুহুতানে যায় ভেঙে কায়া
এলোমেলো বায়ু দোলে বট মেলে ছায়া।
ধূলি খেলা শেষরেখা ডাকে অবেলায়
খোলা চুলে আছি চেয়ে মিছে আলেয়ায়
যদি ওগো পড়ে মনে নাহি মিলে সাড়া
বুঝে নিও নিয়তিও বদলেছে ধারা।
আমি হীনা তুমি আজ কত সুখে হায়
আমি কার কে আমার খোঁজি নিরালায়।
লেখক-রোকসানা মজুমদার সুখী
কবি ও গ্রন্থ প্রণেতা
স্বপ্নদ্রষ্টা ও সভাপতি-স্বপ্নকথা সাহিত্য পরিষদ-স্বসাপ
নিয়মিত লেখক-আলোকিত চকরিয়া ডট কম
এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।