মিয়ানমার থেকে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর দমন অভিযানের পাঁচ বছর পূর্তিতে দেওয়া বিবৃতিতে তিনি এ কথা জানান। তবে কবে থেকে কত সংখ্যক রোহিঙ্গাকে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হবে, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক সম্মিলিত মানবিক সহায়তার অত্যাবশ্যক পদক্ষেপ হিসেবে আমরা বাংলাদেশসহ ওই অঞ্চল থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে কাজ করছি। যাতে তারা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের জীবনকে নতুনভাবে গড়তে পারে।’মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাঁচ বছর আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বর্বর অভিযান চালায়। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, ধর্ষণ, নির্যাতন এবং ব্যাপক মাত্রায় সহিংসতা চালিয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করা হয়। ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয় এবং বাংলাদেশে আশ্রয় চায়। গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের হলোকাস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে তিনি বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যে নৃশংসতা চালিয়েছে, তা মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল এবং যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করেছে। এটার স্বীকৃতিও সেদিন দিয়েছিলেন তিনি।ব্লিঙ্কেন বলেন, মিয়ানমারের এই সেনাবাহিনীই গত বছর ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে দেশটির জনগণকে দমন, নির্যাতন ও হত্যা অব্যাহত রেখেছে। মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎকে নস্যাৎ করার লক্ষ্য নিয়ে তারা এটা করছে। সম্প্রতি গণতন্ত্রপন্থী বিরোধী নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিষয়টি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দেশটির জনগণের জীবনকে সংকটময় করে তোলার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত।রোহিঙ্গাসহ মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার সবার ন্যায়বিচার প্রাপ্তির প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন। তিনি জানান, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা মাতৃভূমিতে নিরাপদে ফিরতে পারছে না—এ বিষয়টি অনুধাবন করে ২০১৭ সাল থেকে তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখার নানা উপায় খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও অঞ্চলের অন্যান্য জায়গায় এই সংকটের শিকার ব্যক্তিদের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র ১৭০ কোটি ডলারের বেশি অর্থের জোগান দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারসহ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া এই অঞ্চলের অন্যান্য সরকারের প্রতি সংহতি জানায় যুক্তরাষ্ট্র।২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন–পীড়নের মুখে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আসে। কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এই রোহিঙ্গাদের স্বভূমিতে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি হলেও এখনো তা কার্যকর হয়নি। আগে থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ভার বহন করছে বাংলাদেশ। কক্সবাজারের জনাকীর্ণ পরিবেশ থেকে সরিয়ে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে নোয়াখালীর ভাসানচরে নেওয়া হচ্ছে। সেখানে তাদের জন্য নানা অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। তবে রোহিঙ্গারা নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় কক্সবাজারের পরিবেশ খারাপ হচ্ছে। বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের উখিয়ার লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরে ‘গণহত্যা’ দিবসের সমাবেশের আয়োজন করেন রোহিঙ্গারা।