নির্বাচন কমিশন বলেছে, নির্বাচনে সব দলের বিশেষ করে প্রধানতম রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ আন্তরিকভাবে প্রত্যাশিত এবং আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলকে অংশগ্রহণ করার জন্য তাদের আন্তরিক আহবান শেষ পর্যন্ত বহাল থাকবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পর, তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন তাদের মতামতে একথা জানিয়েছেসোমবার (২২ আগস্ট) প্রকাশিত এ সংক্রান্ত লিখিত মতামতে জানানো হয়, নির্বাচন কমিশন কোনো দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করতে পারে না এবং সে ধরনের কোনো প্রয়াস নির্বাচন কমিশন গ্রহণ করবে না। কমিশনে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপিসহ ৯টি দল নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অংশ নেয়নি। দুটি দলকে আবেদনের ভিত্তিতে আগামী সেপ্টেম্বর সংলাপে অংশগ্রহণের জন্য সময় দিয়ে সম্মতি দেওয়া হয়েছে।সঠিক ফলাফল নিশ্চিতকরণ, পেশিশক্তি প্রতিরোধ ও রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ সংক্রান্ত দলগুলোর প্রস্তাবের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য হচ্ছে- সংবিধান, আইন ও বিধি-বিধানের অধীনে প্রদত্ত সব ক্ষমতা যথাযথভাবে প্রয়োগ করে, ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগে সৃষ্ট সব বাধা ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠা করে নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগের অনুকূল পরিবেশ ও সুযোগ সৃষ্টি করতে কমিশন সব উদ্যোগ গ্রহণ করবে। সেই সঙ্গে কারচুপির সম্ভাব্য সব সুযোগ প্রতিরোধ করে, সঠিক ও নিরপেক্ষ ফলাফল নিশ্চিত করতে সততা, আন্তরিকতা, নিষ্ঠা, সাহসিকতা ও সর্বোপরি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কমিশন কাজ করে যাবে।নির্বাচনে জয়-পরাজয় অনিবার্য। প্রার্থীদের জয়-পরাজয় মেনে নিতে হবে। পরাজয় মেনে না নেওয়ার মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে।ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত সুপারিশের ক্ষেত্রে কমিশনের সিদ্ধান্ত হলো- দেশি এবং বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকগণকে ভোট পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেয়া হবে। ভোট কেন্দ্রের অভ্যন্তরে সিসি ক্যামেরা প্রতিস্থাপন করে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরভাগের দৃশ্য বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ, সামর্থ্য সাপেক্ষে প্রদান করা হবে।একাধিক দিনে নির্বাচন ও সেনা নিয়োগের বিষয়ে সিইসি বলেছে, একাধিক দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠান করার বিষয়টি নিয়ে কমিশনের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করার আশা রাখে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কাজে সেনা মোতায়েনের প্রস্তাবনাটি যৌক্তিক বলে কমিশন মনে করে।ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) বিষয়ে কমিশন মনে করে, ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি এবং সমর্থন দুই-ই রয়েছে। কমিশন তা শুনেছে এবং মতবিনিময় করেছে। ইভিএম নিয়ে এর আগে আরও যেসব কর্মশালা, মতবিনিময়, পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে, তার সার্বিক ফলাফল পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিচার-বিশ্লেষণ করে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম এর ব্যবহার বিষয়ে যথাসময়ে অবহিত করা হবে। ব্লক চেইন পদ্ধতিতে বিশেষ অ্যাপস এর মাধ্যমে ঘরে বসে ই-ভোট প্রদানের প্রস্তাবটি আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রয়োগ সম্ভব নয়।অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল, এক মঞ্চে প্রচার ও ঋণ খেলাপের বিষয়ে সিইসি তার প্রতিবেদনে বলেছে- অনলাইনে নমিনেশন পেপার দাখিল/গ্রহণের সুযোগ বা বিধান বর্তমানে আরপিওতে বিদ্যমান রয়েছে। একই মঞ্চ থেকে সব দলের প্রার্থীর বক্তব্য প্রদানের এবং প্রচারণার নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করার, নির্ধারিত স্থানে সব প্রার্থীর পোস্টার লাগানো বা লটকানোর ব্যবস্থা করা এবং প্রয়োজনে একই পোস্টারে সব প্রার্থীর প্রচারণার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব আধুনিক। এতে নির্বাচনী ব্যয় কমে আসতে পারে। নির্বাচনী সহিংসতা হ্রাস পেতে পারে। রাজনীতিতে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির নতুন সংস্কৃতির প্রচলন সূচিত হতে পারে।ইউটিলিটি বিল বাকি থাকার কারণে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য বিষয়ক বিধানটি যৌক্তিক করার বিষয়ে কমিশন বিবেচনা করবে।নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংলাপে আসা সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ইসি জানায়, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রয়োজনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয় ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্বাচনকালীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত করার বিষয়টিও সংবিধানের আলোকে বিবেচিত হওয়া প্রয়োজন। তবে কমিশন তার আইনগত অধিকার পুরোপুরি প্রয়োগ করবে। রাষ্ট্রের সব নির্বাহী বিভাগ স্ব স্ব অবস্থান থেকে সংবিধিবদ্ধ দায়িত্ব হিসেবে কমিশনকে সহায়তা প্রদান করবে।ক্ষমতাসীন দলের বাধা, মিথ্যা মামলার বিষয়ে কমিশন নির্বাচনকালীন সব অংশীজনের কার্যকলাপ কমিশন গভীর পর্যবেক্ষণে রাখবে।সংখ্যানুপাতিক সংসদীয় ব্যবস্থার সুপারিশের বিষয়ে সিইসি জানান, কমিশন পরামর্শটি গুরুত্ব সহকারে শ্রবণ ও বিবেচনা করেছে। তবে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ও দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠন করা, সংসদ সদস্যের সংখ্যা বর্ধিত করা এবং নারী আসনে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তাবনাটি দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সরকার এবং জাতীয় সংসদের এখতিয়ারাধীন বলে কমিশন মনে করে।ক্ষমতা প্রয়োগের সুপারিশের বিষয়ে কমিশন বরাবরের মতো প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলতে চায় যে, সংবিধানের অধীন গৃহীত শপথের প্রতি অনুগত থেকে সৎ, নিরেপক্ষ ও সাহসিকতার সঙ্গে সংবিধান ও আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে সংবিধান ও আইনে প্রদত্ত ক্ষমতা সততা ও সাহসিকতার সঙ্গে প্রয়োগ করতে বদ্ধপরিকর।