কক্সবাজার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এজলাস কক্ষে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় ভাড়াটে সন্ত্রাসী কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার সময় ধৃত তিনজন ছাড়া বাকি ১৫ থেকে ২০ জন আসামির একজনও পুলিশের খাতায় গ্রেপ্তার নেই। দিনদুপুরে আদালতে হামলা ও ত্রাসের ঘটনায় বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজ পুলিশের হাতে থাকলেও হামলায় অংশ নেওয়া সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে। ভিডিও ফুটেজে চিহ্নিত অনেক অপরাধীদের দেখা গেলেও চুপ রয়েছে পুলিশ।তবে পুলিশ বলছে- ধৃত আসামিদের রিমান্ড শেষে এবং ভিডিও ফুটেজ নিয়ে আসামিদের দ্রুত চার্জশিটভুক্ত করা হবে। একই সাথে গ্রেপ্তারের অভিযানও চলবে। সূত্রে জানা গেছে- পিএমখালীর আলোচিত মোর্শেদ বলী হত্যা মামলার এজাহার নামীয় ১ নম্বর আসামি আবদুল মালেক ও ৩ নম্বর আসামি কলিমুল্লাহ হাইকোর্টে আগাম জামিন আবেদন করলে হাইকোর্ট তাদের আগাম জামিন নামঞ্জুর করে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে দুই আসামি গত ২৭ জুলাই সকালে কক্সবাজার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে আসেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে নিহত মোর্শেদ বলী’র স্বজনেরা সংঘবদ্ধভাবে তাদেরকে হত্যার উদ্দ্যেশ্যে কক্সবাজার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এজলাস কক্ষে হামলা চালায়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ঘটনায় কক্সবাজার সদর কোর্টের সিএসআই (নিরস্ত্র) মুজিবুর রহমান বাদী হয়ে একই দিনে দ্রুত বিচার আইনে অজ্ঞাতনামা আরো ১৫/২০ জনকে আসামি করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর ৬৬/২০২২।মামলার বিবরণে বলা হয়েছে- বুধবার (২৭ জুলাই) সকাল ১০ টার দিকে ২ জন লোক কিছু লোকের ধাওয়া খেয়ে প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে এসে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এজলাস কক্ষে আশ্রয় নেন। সাথে সাথে ঘটনাস্থল থেকে ধৃত তিন আসামিসহ ১৫ থেকে ২০ জন লোক লাটিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এজলাস কক্ষে বিক্ষিপ্তভাবে ভাংচুর চালায়। আদালতে কর্তব্যরত পুলিশ ও আদালতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদেরকে প্রতিহত করার চেষ্টা করলেও হামলাকারীরা তাদের উপরও হামলা চালিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে।একটি সূত্রে জানা গেছে- আদালতের এজলাসে হামলায় অংশ নেওয়া অপরাধীদের মধ্যে আসামি মালেক ও নিহত মোর্শেদ বলীর লোক ছিল। প্রধান আসামি আদালতে আসার খবর পেয়ে কক্সবাজার শহরের একটি ভাড়াটে কিলার গ্যাংকে কন্ট্রাক করে মোর্শেদের লোকজন। সেই কন্ট্রাকের উপর ভিত্তি করে আদালতের চারপাশে প্রায় অর্ধ শতাধিক গ্যাংয়ের সদস্যরা অংশ নেয়। আসামি আদালতে আসার সাথে সাথে উভয়ে পক্ষে মারামারি ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিচ্ছিন্নভাবে দীর্ঘক্ষণ চলে মারামারির এই ঘটনা।এদিকে ঘটনাস্থলের কিছু সিসি ক্যামেরার ফুটেজ প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। এসব ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়- ঘটনার সময় শহরের চিহ্নিত অনেক সন্ত্রাসী ও গ্যাংয়ের সদস্যরা আদালতে উপস্থিত রয়েছে। মারামারি ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় অংশ নিতেও দেখা যায় অনেকজনকে। এরমধ্যে রয়েছে- শহরের মোহাজেরপাড়া এলাকার ইমাম হোসেন, কায়ছার, রকি, শাহাজাহান, নিকেল, বাদশা, হুমায়ুন, শেফায়েত, হাসপাতাল সড়ক এলাকার আব্দুল্লাহ, রাজিব, বাহারছড়া এলাকার বিশাল, আরিফ, হৃদয় ও ঘোনারপাড়া এলাকার অলি হোসেন। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে মামলা ও নানান অভিযোগও রয়েছে। তারা সবাই নিকেল গ্রুপের সদস্য বলে জানা গেছে। নিকেলের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, মাদক ও চাঁদাবাজিসহ বহু মামলা রয়েছে।এ বিষয়ে গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকালে কক্সবাজার সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. সেলিম উদ্দীন বলেন, ধৃত তিনজন ছাড়া আর কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তিনজনের মধ্যে একজনকে একদিনের রিমান্ডে আনা হচ্ছে এবং বাকি দুইজনকে জেল গেইটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে যদি কোন তথ্য আসে; কারা কারা ছিল সে সকল এবং সিসি টিভির ফুটেজ দেখে তাদেরকে হয়ত গ্রেপ্তার করা না হলে এই মামলার চার্জশিটে যুক্ত করবো। আসামি শনাক্তের বিষয়ে আপাততে বলা যাবে না, কারণ তারা পালিয়ে যাবে। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। এটি দ্রত বিচার আইনে মামলা, অল্প দিনের মধ্যে চার্জশিট দিতে হবে।আদালতে হামলায় শহরের কোন সন্ত্রাসী গ্যাং জড়িত আছে কিনা এমন প্রশ্নে সেলিম উদ্দীন বলেন- এমন কিছু তথ্য আমাদের কাছে আসতেছে। এটি যাচাই-বাছাই করার জন্য আমরা রিমান্ড চেয়েছি।প্রসঙ্গত, কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের চেরাংঘর বাজারে চলতি বছরের ৭ এপ্রিল বিকেল ৫ টার দিকে একই ইউনিয়নের মাইজপাড়ার মরহুম ওমর আলীর ছেলে মোর্শেদ আলী ওরফে মোর্শেদ বলীকে জনসম্মুখে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়।