বরিশালের বানারীপাড়া পৌরসভার বিজয় সিংহ লেনের বাসিন্দা মিজানুর রহমানের চার কন্যার মধ্যে তৃতীয় কন্যা সাদিয়া আফরিন হারিছা। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ছিলেন মনোযোগী। পড়ালেখার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চায় ছিলেন বেশ সক্রিয়।২০১৪ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে দেশের মধ্যে প্রথম ও ২০১৮ সালে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় ধারাবাহিক গল্প বলায় প্রথম স্থান অর্জন করে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গোল্ডেন মেডেল সম্মাননা লাভ করেন। এ ছাড়াও ২০১৭ সালে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক উপস্থিত বক্তৃতায় জাতীয় পর্যায়ে তৃতীয়, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে বরিশাল বিভাগীয় পর্যায়ে সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় এবং বিএফএফ বিজ্ঞান বিতর্ক এবং রচনা প্রতিযোগিতাসহ একাধিক বিষয়ে বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব লাভের গৌরব অর্জন করেছেন।এখন পর্যন্ত একাধিক বিষয়ে বিভাগীয় ও জাতীয়ে প্রায় ৬৭টি পুরস্কার অর্জন করেছেন হারিছা। বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে চাচার সহযোগিতায় ভর্তি হন বরিশাল বিএম কলেজে। চাচা কলেজের শিক্ষক হওয়ায় বেতনের টাকা ফ্রি করার সুযোগ করে দেন।উচ্চমাধ্যমিকেও গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এ বছর এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় ৩০০ নম্বরের মধ্যে ২৭৮ নম্বর পেয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। হারিছা যখন ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়েন— মা গর্ভবতী অবস্থায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বরিশাল হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। আইসিইউতে ১২ ঘণ্টা রাখার প্রয়োজন হলেও টাকার অভাবে ৬ ঘণ্টা রেখেই বাড়িতে নিয়ে যেতে হয়। মায়ের কষ্ট দেখে সেই ছোট্টবেলায় হারিছা মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন— বড় হয়ে ডাক্তার হবেন। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর অধ্যাবসায় শত বাধা পেরিয়ে হারিছা তার স্বপ্নপূরণে একধাপ এগিয়ে গেলেন।হারিছা বলেন, ‘সব সময় শুনি, গরিবের সন্তান ডাক্তার হয়েছে, কিন্তু গরিবের ডাক্তার হতে তেমন শোনা যায় না। কথা দিলাম, আল্লাহর রহমতে আমি বড় ডাক্তার হতে পারলে, যদি কারো চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারি সে কষ্ট আছে, তার কাছ থেকে ভিজিট ফি তো নিবেই না বরং সাধ্যমতো ওষুধের টাকাও দিব।’অপরদিকে গাইবান্ধা শহরের কালীবাড়ি পাড়া গ্রামের হোটেলশ্রমিক বাবা প্রবীর সরকারের দুই সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান প্রতীক কুমার ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ছিলেন মেধাবী। ২০১৯ সালে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে ভর্তি হন গাইবান্ধা সরকারি কলেজে। সেখান থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন এবং সর্বশেষ প্রকাশিত ফলাফলে এমবিবিএস পরীক্ষায় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান।প্রতীকের এমন সাফল্যে বাবা-মা খুশি হলেও সন্তানের ভর্তির টাকা যোগাড় নিয়ে বেড়েছে তাদের দুঃশ্চিন্তা। প্রতীক বুঝেন গরিবের কষ্ট, তাই ভবিষ্যতে একজন মানবিক ডাক্তার হয়ে গরিবদের বিনে পয়সায় চিকিত্সাসেবা দিবেন বলে জানালেন।